পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীনিবাস, নরোত্তম ও শ্যামানন্দ ዓ@ S প্ৰদান করেন। শ্ৰীনিবাস, বীর্যহান্বির, ব্যাসাচাৰ্য্য প্ৰভৃতি সকলেই আসিয়াছিলেন । সন্তোষ দত্ত শ্ৰীনিবাসকে দুইটি সুবর্ণমুদ্রা এবং বহুমূল্য গরদের এক জোড়, ব্যাসাচাৰ্য্যকে একখানি রেশমী বস্ত্র এবং ৫২ টাকা প্ৰণামী দিয়াছিলেন। সকলেরই পাথেয় এবং পদগৌরব অনুসারে মৰ্য্যাদা দেওয়া হইয়াছিল। এই বিরাট উৎসবে গোবিন্দদাস, জ্ঞানদাস প্রভৃতি প্ৰসিদ্ধ কবির উপস্থিত ছিলেন, পূর্ববর্ণিত প্ৰসিদ্ধ রূপনারায়ণ পণ্ডিত, রামচন্দ্ৰ কবিরাজ প্রভৃতি অনেকের নামই এই উপলক্ষে প্ৰেমবিলাসে বর্ণিত আছে। এই সকল ঘটনা প্ৰেমবিলাস-প্ৰণেতা নিত্যানন্দ দাসের চাক্ষুষ বিষয়, সুতরাং তাহাতে বর্ণনার সমস্ত খুটিনাটিই পাওয়া যায়। শুষ্ঠামানন্দ স্বয়ং যে রাধাকৃষ্ণ-বিষয়ক গানটি রচনা করিয়াছিলেন, সেই “শুনলো পরাণ সই, মরম কথা তোরে কই”-আদ্য পদটি উৎসবে যখন গাওয়া হয়, তখন লোকের দৃষ্টি পড়িয়াছিল নরোত্তমের উপর, রাধার কথা ভুলিয়া তাহারা তখন তঁহাদের সন্ন্যাসী রাজকুমারের কথাই ভাবিতেছিলেন। “আমার ধৈৰ্য্যশালা হেমাগার, গুরু গৌবব সিংহদ্বারা,-আমার সকলই তা ছিল সই--বংশীরব বজাঘাত প’ড়ে গেল। অকস্মাৎ” ইত্যাদি কথায় যিনি কৃষ্ণের আহবানে রাজকুলের গৌরব—হৈম প্ৰাসাদ ছাড়িয়াছেন, সর্বপ্রকার অহঙ্কার ছাড়িয়া নিরহঙ্কার, দীনাতিদীন হইয়াছেন।--তাহারই কথা মনে হওয়া স্বাভাবিক হইয়াছিল। এই উৎসবে দেবীদাস ও গোকুলদাস দুই প্ৰসিদ্ধ কীৰ্ত্তনীয়ার সুমধুর পদকীৰ্ত্তনে-বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, গোবিন্দদাস জ্ঞানদাস প্ৰভৃতি মহাজনের পদারসাস্বাদনে উপস্থিত জনমণ্ডলী যেরূপ তৃপ্ত হইয়াছিলেন, তাহাতে খেতুরী কয়েক দিনের জন্য বৈকুণ্ঠপুরীতে পরিণত হইয়াছিল। উৎসবের পূর্ণবৃত্তান্ত, নরহরি চক্ৰবৰ্ত্তীর নরোত্তমবিলাস ও ভক্তিরত্নাকর, নিত্যানন্দের প্ৰেমবিলাস, শিশিরকুমার ঘোষের নরোত্তম-চরিত প্ৰভৃতি পুস্তকে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত আছে । এই স্থানটিকে কি একটা প্ৰস্তরী-লিপিদ্বারা স্মরণীয় করিয়া রাখা যায় না ? নরোত্তম বঙ্গীয় সমাজে আর একটি বিপ্লব উপস্থত করিলেন, তিনি কায়স্থ কিন্তু তাহার অনেকগুলি ব্ৰাহ্মণ শিষ্য হইয়াছিল । এই সকল ব্ৰাহ্মণ আবার পণ্ডিত-শিরোমণি ছিলেন। ভগবান যাহার ললাটে সাধুত্বেব তিলক আঁকিয়াছেন। তঁহার প্রভাব অস্বীকার কবিবার উপায় নাই। নরোত্তমের সর্বপ্ৰথম ব্ৰাহ্মণ-শিষ্য ছিলেন বলরাম মিশ্র। একজন বিশিষ্ট ব্ৰাহ্মণ নরোত্তমের শিষ্য হইয়াছেন, এ সংবাদে সমস্ত ব্ৰাহ্মণ-সমাজ উত্তেজিত হইয়া উঠিলেন। এই উত্তেজিত দলের নেতা হইলেন পদ্মার তীরে গান্তিলাগ্রাম-নিবাসী গঙ্গানারায়ণ চক্ৰবৰ্ত্তী । ইনি সর্বশাস্ত্ৰে সুপণ্ডিত ও ধনশালী লোক ছিলেন । ইহার বাড়ীতে যে টোল ছিল তাহাতে পাঁচ শত ছাত্রের ব্যয়ভার ইনি বহন করিতেন। “বারেন্দ্ৰ ব্ৰাহ্মণ তেঁহো পণ্ডিত প্ৰধান। পাঁচ শত পঢ়য়ার নিত্য অন্নদান"(-প্রেমবিলাস, বিংশ তরঙ্গ)। এই সময়ে বলরাম মিশ্র ছাড়া আরও দুইটি ব্ৰাহ্মণ নিরোত্তমের চরণ আশ্রয় করিয়াছিলেনইহাঙ্গের নাম রামকৃষ্ণ ও হরিনারায়ণ । গঙ্গানারায়ণ চক্রবর্তী অত্যন্ত মৰ্ম্মাহত ও উত্তেজিত হইয়া ইহাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করিতে লাগিলেন। তবে তঁাহার কৃষ্ণে ভক্তি ও শাস্ত্ৰে বিশ্বাস ছিল, সুতরাং ভাবিয়াছিলেন, নিমজাতিকর্তৃক ব্ৰাহ্মণকে শিন্য করার প্রমাণ কোন শাস্ত্ৰে কায়স্থ গুরুর ব্ৰাহ্মণ শিন্তি ।