পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নাসিরুদিন ও পরবর্তী পাঠান-রাজগণ V8) যান। সুতরাং মুর্থ নহেন। তারপর ইহার মনভুলানো রূপ,-তাহার সাক্ষী-আমার দুটি চক্ষু, আর পরিচয় নিম্প্রয়োজন ।” বাদসাহ ও বেগম উভয়েই রাজকুমারীর মনোভাব জানিলেন। অনুসন্ধানে জানিলেন, ইনি একটাকিয়ার ভাদুড়ী বংশজাত । এই বংশের অনেক যুবকের সঙ্গেই পাঠান বাদাসাহেরা কন্যার বিবাহ দিয়াছেন, তাহা গ্ৰন্থভাগে উল্লেখ করিয়াছি। সুতরাং তঁহাদের আপত্তির কোন কারণ রহিল না। বাদসহ কালাপাহাড়কে ডাকাইয়া মুসলমান ধৰ্ম্ম গ্রহণপূর্বক কুমারীকে বিবাহ করিবার জন্য জেদ করিলেন, কালাপাহাড় তেজের সহিত এই প্ৰস্তাব প্ৰত্যাখ্যান করিলেন। ক্রুদ্ধ হইয়া বাদসাহ কালাপাহাড়কে শূলে দেওয়ার আদেশ করিলেন। যখন সমস্ত আয়োজন হইয়াছে, তখন অকস্মাৎ ভূতলে পতিত একটি বিদ্যুতের ন্যায় দুলারী বিবি রাজপ্ৰাসাদ হইতে অবতরণ করিয়া ঘাতককে আদেশ করিলেন, “আগে আমায় হত্যা করিয়া, তারপরে ইহার অঙ্গ স্পর্শ কর।” রাজকুমারীর অসামান্য রূপ এবং অপূর্ব অনুরাগ দেখিয়া কালাপাহাড়ের গোঁড়ামি ভাঙ্গিয়া গেল, ফুলশারের আঘাতে ধৰ্ম্মবেদী বিদীর্ণ হইল। কালাপাহাড় বিবাহে সম্মত হইলেন, কিন্তু তিনি হিন্দুধৰ্ম্ম ত্যাগ করিলেন না। তিনি বহু অনুনয় বিনয় এবং অজস্র অর্থ ব্যয় করিয়াও সামাজিক অত্যাচার ও নিগ্ৰহ হইতে অব্যাহতি পাইলেন না । জগন্নাথে যাইয়া এ অবস্থায় কি কৰ্ত্তব্য, প্ৰত্যাদেশের জন্য সাত দিন অনাহারে ধন্ন দিয়া রহিলেন, কিন্তু কোন আদেশ পাইলেন না ; পরন্তু পাণ্ডারা অত্যন্ত অপমান করিয়া তাহাকে শ্ৰীমন্দির হইতে তাড়াইয়া দিল । ইহার পরে প্রতিশোধের পালা। সে প্ৰতিশোধ যে কি ভয়ানক, তাহ সমস্ত পূৰ্ব্বভারত হাড়ে হাড়ে বুঝিয়াছে। মুসলমান ধৰ্ম্মগ্রহণ করিয়া বাদাসাহের সৈন্যের সাহায্যে তিনি হিন্দুধৰ্ম্ম জগৎ হইতে একেবারে বিলোপ করিবেন, এই সঙ্কল্প করিয়া বসিলেন। ইসলাম ধৰ্ম্মাবলম্বী হওয়ার পাব তাহার নাম হইল “মহম্মদ ফর্মুলি”, কিন্তু তাহার “কালাপাহাড়’ নামই দেশবিশ্রাত। এই নাম অবশ্য হিন্দুরা দিয়াছিলেন ; তঁাহার নাম কালাচাঁদ রায় হইতেই সম্ভবতঃ এই নামের উদ্ভব। এই নাম হিন্দুর দেবতা ভগ্নকাব্বীদের পক্ষে যোগীরূঢ় হইয়া গিয়াছে, কবিরাজ বলিতে যেরূপ বৈদ্যাকেই শুধু বুঝায়, কালাপাহাড় বলিতেও সেইরূপ দেবদ্রোহীকে বুঝায়। উড়িষ্যার পাণ্ডাদের কৃত অপমান তিনি ভুলিতে পারেন নাই, সুতরাং প্রথমেই বাদাসাহের সৈন্ত লইয়া উৎকল বিজয়ার্থ অভিযান করিলেন। কালাপাহাড় উৎকাল-পতিকে যুদ্ধে নিহত করিয়া শ্ৰীক্ষেত্রে যেরূপ রোমহর্ষণ অত্যাচার করিয়াছিলেন, তাহা বলিবার নাহে । উড়িষ্যা হইতে গৌড়ে প্রত্যাগমন কালে তিনি শত শত হিন্দু মন্দির ভাঙ্গিয়া দেবমূৰ্ত্তিসমূহ অপবিত্ৰ স্থানে ফেলিয়া বহু লোককে অত্যাচার পূর্বক ইসলাম-ধৰ্ম্মে দীক্ষিত করিয়া যে অশ্রুতপূর্বক কাণ্ড করিয়াছিলেন, তাহার প্রমাণ এখনও ভারতীয় চিত্রশালাগুলিতে ক্ষতবিক্ষত দেব-অঙ্গে এবং চুর্ণবিচূর্ণ মন্দির-স্তম্ভে প্রাপ্ত হওয়া যায়। গৌড়ে ফিরিয়া অসিয়া কালাপাহাড় বৃহৎ বঙ্গ/৪৬ लियांश् ७ श्लूि-विषय । siféx°Hዛ |