পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ংস্কৃত প্ৰভাবান্বিত বাঙ্গলা-সাহিত্য SP নিজেকে বুদ্ধের অবতার বলিয়া পরিচয় দিয়াছেন। ইনি সোচ্ছাসে লিখিয়াছেন যে পুরীর দারুব্ৰহ্মকে ইনি ‘পাপিষ্ঠ’ বৈষ্ণব ও মুসলমানগণের হাত হইতে বলপূর্বক গ্ৰহণ করিয়া পুনরায় বৌদ্ধজগতে সুপ্ৰতিষ্ঠিত করিবেন। দারুব্ৰহ্মকে এইভাবে অভিষিক্ত করিয়া তিনি তৎসম্মুখে তঁহার রামলীলা ( রামায়ণ ) পাঠ করিবেন, এই উদ্দেশ্যে তিনি কাব্যখানি রচনা করিয়াছেন । কাব্যভাগে প্ৰদত্ত র্তাহাব আত্মবিবরণ পাঠ করিলে মনে হয় যে তাঁহার বহু শিষ্য ও অনুচর ছিল। তিনি নিজকে শূদ্র বলিয়া পরিচিত করিয়াছেন। এই কাব্যের মাত্র একখানি প্রাচীন পুথি পাওয়া গিয়াছে— তাহা প্ৰাচ্যবিদ্যামহার্ণব, নগেন্দ্ৰনাথ বসু মহাশয়ের নিকট আছে। তিনি এতৎসম্বন্ধে হরপ্ৰসাদসংবৰ্দ্ধনার পুস্তকে একটি সুদীর্ঘ প্ৰবন্ধ লিখিয়াছেন, তৎপূর্বে আমি বঙ্গভাষা ও সাহিত্যে এই পুস্তকের কথা লিখিয়াছিলাম। পুস্তকখানি প্ৰকাশিত হওয়া উচিত। রামায়ণের অন্যান্য অনুবাদকগণের মধ্যে মহাভারতের লেখক ষষ্ঠীবর সেন ও গঙ্গাদাস সেনের রামায়ণ উল্লেখযোগ্য। অদ্ভুত আচাৰ্য্যের রামায়ণখানি প্ৰকাশিত হইয়াছে। বহু পাণ্ডিত্য ও কবিত্বপূর্ণ বৃহদায়তন ‘রামরসায়ন’খানি কবি বায়ুনন্দন গোস্বামীর অপূৰ্ব্ব কীৰ্ত্তি—ইনি উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে জীবিত ছিলেন । এই কাব্য বটতলা হইতে প্ৰকাশিত হইয়াছে। রামমোহনের রামায়ণ ভক্তির অফুরন্ত সুধাভাণ্ডের মত; তাহার একখানি মাত্ৰ পাণ্ডুলিপি সাহিত্য-পরিষদের পুথিশালায় আছে । জয়চন্দ্র রাজার আদেশে দ্বিজ ভবানী রামায়ণের উত্তরকাণ্ড অবলম্বনে “লক্ষ্মণ-দিগ্বিজয়” নামক এক কাব্য প্ৰণয়ন করেন। এই কাব্য-রচনার জন্য তিনি উক্ত রাজার নিকট হইতে প্ৰত্যহ ১০২ টাকা পারিশ্রমিক পাইয়াছিলেন । এই কাব্য অষ্টাদশ শতাব্দীতে বিরচিত। সেই সমযে এই পারিশ্রমিকের মূল্য অনেক বেশী ছিল। শিবচন্দ্র সেনের “সারদমঙ্গল”-রামায়ণের সংক্ষিপ্ত অনুবাদ । শিবচন্দ্র সেন বৈদ্যবংশীয়, বিক্রমপুরনিবাসী ছিলেন। পাঁচপুরুষ পূর্বে তিনি জীবিত ছিলেন। এই পুস্তক একবার ছাপা হইয়াছিল। ভাগবতের অনুবাদের মধ্যে মালাধর বসুর “শ্ৰীকৃষ্ণবিজয়’ই সর্বাপেক্ষা প্ৰসিদ্ধ গ্ৰন্থ। বিখ্যাত শুষ্ঠামানন্দ, শঙ্কর কবিচন্দ্ৰ, লাউড়িষ্যা কৃষ্ণদাস ও মাধবাচাৰ্য্য প্ৰভৃতি কবিরা ভাগবতের অংশবিশেষ রচনা করেন। গৌড়ীয় বৈষ্ণবেরা শ্ৰীকৃষ্ণের ঐশ্বৰ্য্য গ্ৰাহ করেন না, সুতরাং অধিকাংশ অনুবাদই ভাগবতের ১০ম ও ১১শ স্কন্ধ সম্পর্কিত এবং ইহাদের প্রত্যেকের মধ্যেই ভাগবতবহির্ভূত কথা আছে। রাধার প্রেমলীলা অনেকগুলির মধ্যেই বর্ণিত হইয়াছে। এই প্ৰসঙ্গটি অবশ্য ভাগবতে নাই। আমরা প্ৰায় সমস্ত পুরাণেরই প্ৰাচীন বঙ্গানুবাদ পাইয়াছি। তাহা ছাড়া রূপ-গোস্বামীর বিদগ্ধ-মাধব, ললিত-মাধব, উজ্জ্বল-নীলমণি, কৃষ্ণদাস কবিরাজের গোবিন্দ-লীলামৃত প্ৰভৃতি বহু সংস্কৃত পুস্তকের বঙ্গীয় প্রাচীন পদ্যানুবাদ আমরা পাইয়াছি। শেষোক্ত কাব্যের অনুবাদ করিয়াছিলেন কবি যদুনন্দন দাস। ইনি শ্ৰীনিবাস আচাৰ্য্যের কন্যা হেমপ্ৰভা দেবীর মন্ত্র-শিষ্য ছিলেন। বুদ্ধের অবতার রামানন্দ ঘোষ । অপব্যাপার রামায়ণ । অনুবাদ-গ্ৰন্থ । ভাগবত ও অপরাপর পুরাণ।