পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NYM বৃহৎ বঙ্গ পুত্রের নাম শিবরাম। ইনি যৌবনকালে মামুদ সরিফ নামে এক অত্যাচারী ডিহিদারের উৎপীড়নে রাজা বাঁকুড়া রায়ের আশ্রয়ে চলিয়া যান এবং রাজকুমার রঘুনাথের গৃহশিক্ষক নিযুক্ত হন। চণ্ডীকাব্য ১৫৭৭ খৃষ্টাব্দে বিরচিত হইয়াছিল। এই কাব্যের অধিকাংশ সংস্কৃত কলেজের ভূতপূৰ্ব্ব অধ্যক্ষ ই. বি. কাউএল ( B. B. Cowel ) সাহেব ইংরেজী কবিতায় অনুবাদ করেন । কবিকঙ্কণের পর যে সকল কবি চণ্ডীমঙ্গল রচনা করিয়াছিলেন, তঁহাদের মধ্যে জপসা ( ফরিদপুর)-নিবাসী জয়নারায়ণ কর্তৃক লিখিত “চণ্ডীকাব্যই।” সৰ্ব্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য। ইহার একখানি পুথি “বার ভুঞা”র লেখক আনন্দনাথ রায় মহাশয়ের বাড়ীতে আছে। এই গ্ৰন্থখানি প্ৰকাশিত হওয প্রয়োজনীয় । ধৰ্ম্মমঙ্গলের আদি লেখক ময়ুর-ভট্ট সম্ভবতঃ দ্বাদশ শতাব্দীর লোক, তঁাহার রচিত পুস্তক বঙ্গের কোন পল্লীতে হয়ত এখনও আছে। একখানি স্বৰ্গীয় হরপ্ৰসাদ শাস্ত্রী মহাশয় পাইয়াছিলেন বলিয়া শুনিয়াছিলাম। কিন্তু তাহা নাকি হারাইয়া গিয়াছে। এই পুস্তকখানির সন্ধান হওয়া অতীব প্রয়োজনীয় । শ্ৰীযুক্ত বসন্তকুমার চক্ৰবৰ্ত্তা, এম. এ. এই পুস্তকের প্রথমাৰ্দ্ধ প্ৰকাশ করিয়াছেন। এই কাব্যে যে সকল প্ৰসঙ্গ লিখিত হইয়াছে আমরা তাহার একবার উল্লেখ করিয়াছি । পরবর্তী লেখকগণ এই প্রাক-সংস্কৃত যুগের কাব্যখানিকে রূপান্তরিত করিলেও ইহাব মধ্যে অনেক ঐতিহাসিক উপাদান আছে। ভিন্ন ভিন্ন কবিকৃত “ধৰ্ম্মমঙ্গল”কে একস্থানে জড় করিয়া রীতিমত আলোচনা করিলে ইহাদের মধ্যে ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত ঐতিহাসিক উপকরণ পাওয়া যাইবে বলিযা আমাদের বিশ্বাস। মযুৱ-ভট্টের পরে মাণিক গাঙ্গুলী, রূপরাম, সীতারাম এবং ঘনরাম প্ৰভৃতি কবি ধৰ্ম্মমঙ্গল প্ৰণয়ন করেন। মাণিক গাঙ্গুলীর ধৰ্ম্মমঙ্গল সাহিত্য-পরিষদ প্রকাশ করিঘাছেন । এই ব্ৰাহ্মণ-কবি বিলুপ্ত বৌদ্ধযুগের রাজন্যবর্গের মহিমজ্ঞাপক কাব্য লিখিতে যাইয়া ভয় পাইয়াছিলেন । স্বপ্নের দোহাই দিয়া শেষে এই কাৰ্য্যে হস্তক্ষেপ করিয়াও জাতিচু্যুত হইবার ভয়ে আড়ষ্ট হইয়াছিলেন। মাণিক গাঙ্গুলী, রূপরাম, ঘনরাম চক্ৰবৰ্ত্তী, সীতারাম প্রভৃতি কবি-রচিত পূৰ্বোক্ত মঙ্গল-কাব্যগুলি ছাড়া লক্ষ্মী, সরস্বতী, শীতলা, শনি প্ৰভৃতি বহু দেবতা-সম্বন্ধে ক্ষুদ্র বৃহৎ কাব্য বাঙ্গলায় রচিত হইয়াছিল। রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণগুলিও এই সকল মঙ্গল-কাব্য দ্বারা বাঙ্গলার ঘরে ঘরে নব-ব্রাহ্মণ্যের বাৰ্ত্তা পৌছাইয়া দিয়াছিল। ইহাদের চেষ্টায় বঙ্গভাষা সাধুভাষায় পরিণত হইয়াছে। প্রাকৃত যুগের দৈন্য ঘুচিয়া গিয়া এই ভাষার অশেষ শ্ৰীবৃদ্ধি হইয়াছে। জনসাধারণ এখন এত সংস্কৃতাত্মক কথা বুঝিতে পারে যে ভারতের অন্য কোন ভাষা-ভাষী লোকেরা এ বিষয়ে বাঙ্গলার সমকক্ষ হইতে পারে নাই। নালন্দা, বিক্রমশীলা প্ৰভৃতির শিক্ষা বাঙ্গালীর অস্থিমজ্জায় ঢুকিয়াছিল—তাহাতে এই ভাষা পূৰ্ব্ব হইতে পাণ্ডিত্যের জন্য প্ৰস্তুত ছিল, কিন্তু সংস্কৃত গ্রন্থগুলির এই যে অনুবাদের বন্যা দেশময় বহিয়া গেল, তাহাতে এই ভাষার স্বর্ণফসল ফলিয়া উঠিল, এখন ভারতে সমস্ত প্ৰাদেশিক ভাষার মধ্যে বাঙ্গলা ভাষাই ংস্কৃতের সর্বাপেক্ষা বেশী সন্নিহিত। মুসলমান-প্ৰভাবে বাঙ্গলার নাগরিক জীবনে ও धर्श्वभठळ ।