পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Č 5ङशृJ-यूश জগদীশকে কি দেখিতে পাইব না ?” এই জগৎকে চারিদিকে শুদাম ও কৃষ্ণ বৰ্ণ ঘিরিয়া বসিয়াছে; আকাশ-প্ৰাকৃতিক দৃশ্য, নদ-নদী, সমুদ্র-এ সমস্তই সেই নীলাভ শুষ্ঠাম-মিশ্র কৃষ্ণবর্ণ। অপরাপর রঙ্গের খেলা ময়ুরপুচ্ছের ন্যায়, সেই কৃষ্ণ-মধুরিমাকে সাজাইতেছে। চণ্ডীদাসের রাধা সেই কৃষ্ণবর্ণের মাধুরীতে ডুবিয়া আছেন। তিনি চুল হইতে মালতীর মালা খসাইয়া ফেলিয়া মুক্ত-কুন্তলে কৃষ্ণের আভা দেখিয়া মুগ্ধনেত্ৰে চাহিয়া আছেন—“এলাইয়া বেণী, ফুলের গাঁথুনি, দেখয়ে খসায়ে চুলে”-ক্ষণে ক্ষণে মেঘের মধ্যে অরূপের রূপের আভা দেখিয়া “না চলে নয়নে তারা”-ময়ুর-ময়ূরীর কণ্ঠের বর্ণ দেখিয়া সেই কৃষ্ণ-বৰ্ণ মনে পড়িতেছে। র্তাহার নাম শুনিয়াছেন, ইন্দ্ৰিয় নিরস্ত হইয়া গেলে জীবমাত্র তাহার আহবান শুনিতে পায়, কারণ তিনি সকলকেই তাহার মধুৱাক্ষরা ভাষায় ডাকিতেছেন। সেই সঙ্গীত আমাদের কাছে ব্যর্থ হইয়া যায়, কারণ আমাদের কাণ সংসারের কোলাহলের দিকে-- এজন্য সেক্সপীয়র <fattice, " Such music is in our eternal soul, but for the vest nre of decay that enshrouds it, we canno, hear.' রাধা সেই ডাক শুনিয়াছেন, এজন্য “বিরতি আহারে, রাঙ্গা বাস (গেরুয়া) পরে, যেমন যোগিনী পারা” এই প্রেমের বাউড়িয়ার ক্ষুধাতৃষ্ণা কোথায় ? তিনি গৈরিক পরেন, “সদাই চঞ্চল, বসন অঞ্চল, সম্বরণ নাহি করে। বসি থাকি থাকি উঠয়ে চমকি, ভূষণ খসিয়া পডে।” রাধিক “ঘরের বাহিরে, দণ্ডে শতবার, তিল তিল আসে যায়, মন উচাটন, নিশ্বাস সঘন, কদম্ব-কাননে চায়।” এই ছবির সঙ্গে চৈতন্যদেবের ছবি মিলাইয়া দেখুন। রাধিক “যে করে কানুর নাম—তার ধরে পায়, পায় ধরি কঁাদে সে চিকুর গডি যায় । সোনার পুতুলী যেন তলে লুটায়”—যিনি কৃষ্ণনাম শুনিলে আচণ্ডাল সকলেব পায় গড়াগড়ি দিতেন,-এই রাধাব চিত্র কি তঁহারই পূৰ্ব্বাভাস নাহে ? র্যাহারা বৈষ্ণব পদাবলী সামান্য নায়িকার প্ৰেম বলিয়া ভুল করিবেন, সেই সকল সংসারী লোক এই পদাবলী-রাজ্যে প্রবেশের অধিকারী নহেন । r ভগবান পুত্ৰকন্যাস্ত্রীরূপে দিনরাত্রি আমাদের সেবা করিতেছেন। এই আমাদের চিরন্তন প্ৰভু-চিরন্তনসেবকের-সত্তা যিনি উপলব্ধি করিয়াছেন তিনিই বলিতে পারেন, “একথা কহিবে সই একথা কহিবে । বৰ্মণী এমন তপ করিয়াছে কবে । পুরুষ পরশমণি নন্দের কুমার। কি ধন লাগিয়া ধরে চরণে আমার ?” যাহার স্পর্শ যাদুকাঠি, তাহাতে সীসা ও লোহা পৰ্য্যন্ত সোণা হইয়া যায়, তিনি কেন-কোন ধনের জন্য—“আমার পায়ে ধরেন ? সেই বিরাট পুরুষ ক্ষুদ্র হইয়া ক্ষুদ্ৰাদপি ক্ষুদ্র আমার নিকট এক ভিক্ষার জন্য ( তাহা ভালবাসা) আমার কুটির-দ্বারে আসিয়া হাত পাতিয়া থাকেন। তঁহাকে না চিনিয়া আমরা প্ৰত্যহ ফিরাইয়া দিতেছি। র্তাহার সেই অসীম প্ৰেম-পুত্ৰকলাত্ৰ মাতাভগিনীর মারফৎ আমরা প্রত্যহ পাইতেছি,-“আমি যাই-যাই-যাই-বলে তিন বোল, কত না চুম্বন দেয়—ক’ত দেয় কোল। পদ আধা যায় পিয়া চায় পালটিয়া। বয়ান নিরখে কত কাতর হইয়া । করে কর ধরি পিয়া শপথি দেয় মোরে। পুন দরশন লাগি কত চাটু বলে।” এই যে প্রেমের খেলা তাঁহারই বিশ্বে নিরন্তর চলিয়াছে—