পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Os o Y8 বৃহৎ বঙ্গ করিয়াছেন (এই পুস্তকের ২৮৮-৮৯, পৃঃ) । এই সকল ইতিহাস এখন বিলুপ্ত হইয়াছে। সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত, সেক শুভোদয়া, গোপাল ভট্ট ও আনন্দ ভট্ট রচিত বল্লালচরিত প্ৰভৃতি সামান্ত কয়েকখানি পুস্তক ছাড়া এদেশে বিশাল হিন্দুরাজত্বের ইতিহাসের কিছুই নাই । আৰ্য্যাবর্কে যেরূপ আৰ্য্যগণের অসামান্য স্থাপত্য ও শিল্পকাত্তি ধ্বংস পাইয়াছে, তথায় তাহদের ইতিহাসও সেইরূপ ধ্বংস পাইযাছে। কিন্তু এখনও চেষ্টা করিলে কিছু উপকরণের উদ্ধাব হইতে পারে। রাষ্ট্রবিপ্লবই এই ইতিহাস-বিলোপের প্রধান কারণ। রাষ্ট্রনীতি ও রাষ্ট্রগৌরব—এদেশে কোনকালেই জাতীয় গৌরবের বিষয় হয় নাই—উহা বংশগৌরবের কাবণ হইত, সুতরাং একবংশের ধ্বংসের পর অপর বংশের অভু্যদয়ে সেই গৌরব ধ্বংস পাহঁত ! ধৰ্ম্মগৌরবই এই দেশের জাতীয় গৌরবের হেতু ছিল ; এই জন্য সমস্ত জাতি তাহ রক্ষা করিয়াছে। কিন্তু দুই প্ৰবল ধৰ্ম্মের সংঘর্ষ হইলে, বিজিত ধৰ্ম্মের গৌরব জয়ী প্ৰতিদ্বন্দ্ৰীৱ বিলুপ্ত করিয়া ফেলিয়াছে। এই ভাবে হিন্দুরা বৌদ্ধ ধৰ্ম্মের গৌরবজনক ইতিহাসের বিলোপ-সাধন করিয়াছেন। জাতীয় ইতিহাসেব কয়েকটি পৃষ্ঠা মাত্র প্রধৰ্ম্মশাস্ত্ৰেৰ অনাশ্ৰয় লইয়া কথঞ্চিৎ জীবন রক্ষা কবিঘাছে। পুরাণগুলিতে এই ভাবে প্রাচীন বাজ গণের কিছু কিছু বিবরণ পাওয়া যায়। ঐতিহাসিক প্রচেষ্টা এদেশে এত বেশী ছিল যে, এদেশের রাজগণ তালপত্র, তেকীটপত্র এবং কাগজের উপবও সম্যক বিশ্বাস স্থাপনা না করিয়া শিলাখণ্ডে ও তামপত্রে-তীহাদের কীৰ্ত্তিকথা উৎকীর্ণ করিয়া রাখিতেন ! অশোকেৰ ৮৪০০০। “অনুশাসনের মধ্যে মাত্র ৪০||৪১টি পাওয়া গিযাছে। সেদিনও ( ১৬০৫ খৃঃ অব্দে ) অশোকের এলাহাবাদ অনুশাসনের কতকাংশ কাটিয়া ফেলিয়া জাহাঙ্গীব বাদশাহ তাহার উপর স্বীয় দৌরাত্ম্যের চিহ্ন রাখিয়াছেন। মুসলমানের ইতিহাস লিখিতে জানিতেন, হিন্দুরা তাহা জানিতেন না-একথা আমি বিশ্বাস করি না । হিন্দুবা আধ্যাত্মিক বিষয়ে বেশ অনুবাগী ছিলেন। বলিয়া পার্থিব কোন ব্যাপারেই তঁহাদের অনুরাগের ক্রটি দেখা যায় না। শিল্প, স্থাপত্য প্রভৃতি ব্যাপারেও তঁাহারা জগজ্জয়ী হইযাছিলেন । এখনও জগ৩ে হিন্দু ও বৌদ্ধের যে সকল কীৰ্ত্তিচিহ্ন সহস্ৰ বৎসরের অত্যাচার সহিয়া জগতে টিকিয়া আছে, অন্য কোন ধৰ্ম্মাবলম্বীদের তাহা নাই। মুসলমানগণেব ইতিহাস লেখার প্রবৃত্তি র্তাহাবা বৌদ্ধগণেব নিকট পাইয়াছিলেন। তাহদের এশিয়াতে প্ৰাধান্ত অল্পকাল হইল বিলুপ্ত হইয়াছে, এইজন্য তঁহাদেব খাতাপত্রগুলি লুপ্ত হয নাই ; এবং প্রাচ্য সভ্যতায় সমস্ত মনুষ্যজাতির ইতিহাসের জন্য জায়গা করা হইয়াছে, এজন্য হয়ত সেগুলি ভবিষ্যতে লুপ্ত নাও হইতে পারে। কিন্তু "আজ যদি মারহাট্টার বিজয়ী হইয়া ভারত অধিকার করিতেন, তবে বালাজি বিশ্বনাথ, নানা ফার্নিবিশ কিংবা ভাস্কর পণ্ডিতের হাতে মুসলমানদের ইতিহাস রক্ষা পাইত কি না সন্দেহ । বৰ্গীরা হিন্দু, কিন্তু হিন্দুমন্দিরও তঁহাদের অত্যাচার হইতে বাদ পডে নাই। বাঙ্গলার প্রান্তভাগে যে কয়েকটি হিন্দুবংশ শত শত বৎসর টি কিয়া আছে তাহাদের ইতিহাস দুই একখানি পাওয়া গিয়াছে। বন্যায় ধবংসপ্ৰাপ্ত দেশের দুই একটি অট্টালিকায় লুপ্তাবিশেষ যেরূপ তথাকার অতীত ইতিহাসের সাক্ষী হইয়া থাকে, এই দুই একখানি পুস্তকও আমাদের ঐতিহ্যের