পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

d d e R বৃহৎ বঙ্গ প্ৰাচীনত্ব প্রমাণিত হয়। ভারতবর্ষের আদি ঐতিহাসিক যুগ হইতে পরবর্তী সভ্যতার ইহারা পর পর সাক্ষী। এখনও এই সকল স্থানের বিশেষরূপ সন্ধান হয় নাই, ভূগর্ভে যে অনেক প্ৰমাণ অজ্ঞাত অবস্থায় বৰ্ত্তমান—তাহার কিছু কিছু নিদর্শন এই দেশের অনেক স্থলেই আছে। এই দেশ কয়েকটি কারণে বাঙ্গালীর চিরস্মরণীয়। অশোক কলিঙ্গ-দেশে কোন রাজার সঙ্গে তদ্রুপ ভীষণ যুদ্ধ করিয়াছিলেন, তাহার উল্লেখ নাই। কিন্তু তখন তামলিপ্তই সে দেশের মুখ-পাত ছিল এবং সেই স্থানের শৌৰ্য্যবীৰ্য্যের কথা মহাভারতের সময় হইতে নানা সূত্রে আমরা জানিতে পারি। তাহা হইলে খুব সম্ভব কলিঙ্গ-যুদ্ধের নেতা ছিলেন, তমলুকের অধিপতি; সেই সময়ে উড়িষ্যার আর কোন রাজা এত প্ৰবল ছিলেন না। খারাবেল সেই সময়ের পরবর্তী। যদি তমলুকের লোকেরা এই যুদ্ধে বিশেষ বীরত্ব ও সাহস দেখাইয়া মৃত্যুমুখে পতিত হইয়া থাকেন, তবে এই স্থান হইতেই অশোকের মনের উপর যে বিপ্লব চলিয়া গিয়াছিল সমস্ত জগৎবাসী সেই মানসিক পরিবর্তনের ফলভাগী হইয়াছিলেন । হিউনসাঙ্গ তাম্রলিপ্তে অশোকের যে ২০০ ফুট উচ্চ স্তম্ভ দেখিয়াছিলেন, তাহা তাহার বিজয়-স্তম্ভ। কিনা বলা যায় না । দ্বিতীয়তঃ বঙ্গদেশের এই তমলুক বন্দর বৌদ্ধ, জৈন ও হিন্দু কত শত সাধুর পদব্রজঃপূত তাহা নির্ণয় করা কঠিন। বিশ্ববিশ্রাত হিউনসাঙ্গ, ইচিং, ফাহায়েন প্ৰভৃতি বিদেশী পৰ্য্যটকগণ এই স্থানে অর্ণবযানে আসিয়াছিলেন, এবং এদেশ দেখিবার জন্য নানাকৃচ্ছ স্বীকার করিয়াছিলেন। যে বৌদ্ধ ভিক্ষুর দল যুগে যুগে এই দেশ হইতে যাব, বালী সুমিত্ৰা, শ্যাম, পেগু, কাম্বোডিয়া, সিংহল এবং বহু উপদ্বীপে ধৰ্ম্ম প্রচারার্থ গমনাগমন করিয়াছেন, মহেন্দ্র ও সঙ্ঘমিত্ৰ হইতে-আচাৰ্য্য বোধিধৰ্ম্ম ( ৫২৬ খৃঃ অব্দে ) তাওলীন এবং তাং চেং তিং পৰ্যন্ত শত শত সাধু ভারতসাগর অতিক্ৰম করিয়া দূরদূরান্তরে গিয়াছিলেন, তঁহাদের সকলকেই এই পথের পথিক হইতে হইয়াছিল ! ফাহায়েন দুইটি বৎসর তাম্রলিপ্তে বসিয়া বৌদ্ধ গ্ৰন্থ নকল করিয়াছিলেন এবং ছবি অঙ্কন করিতে শিখিয়াছিলেন,-সুতরাং এই দেশটি যে বৌদ্ধ ধৰ্ম্মের একটি প্ৰধান কেন্দ্ৰ ছিল, এবং এখানে যে বিস্তৃত পাঠাগার ও বহু সঙ্ঘারাম ছিল, তাহার নিশ্চিত প্ৰমাণ পাওয়া যাইতেছে। আমরা অনুমান করিতে পারি, বঙ্গীয় গল্পসাহিত্যে র্যাহারা বিখ্যাত, সেই ধনপতি ও শ্ৰীপতি সদাগর মঙ্গলকোট হইতে এই তমলুকের বন্দর দিয়া সিংহলে গিয়াছিলেন। বাঙ্গলার শত শত অর্ণবপোত এই বন্দরে বাধা থাকিত, এবং বাণিজ্য-সম্ভার, শিল্পদ্রব্য এবং বাঙ্গলার ধৰ্ম্ম লইয়া সমস্ত জগৎ পরিভ্রমণ করিত। তাম্রলিপ্ত জৈনদিগের চতুৰ্ধাম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান কাৰ্য্য-কেন্দ্র ছিল। তৃতীয়তঃ এই তমলুকের রাজা অনন্তব্যৰ্ম্ম ( ১০৭৮-১১৪২ খৃঃ ) সমস্ত উড়িষ্যাদেশ জয় করিয়া প্রসিদ্ধ গঙ্গাবংশ তাদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। কিঞ্চিদৃঢ়েন পঞ্চ শতাব্দীকাল পৰ্য্যন্ত বাঙ্গালী গঙ্গাবংশ উড়িষ্যার অধিকারী ছিলেন, ইহা মেদিনীপুরবাসী তথা সমস্ত বাঙ্গালীর কম গৌরবের কথা নহে। এই মেদিনীপুর এক সময়ে জঙ্গলাবৃত ছিল, এখান হইতে ঝাড়খণ্ডের বিশাল অরণ্য দূরবত্তী ছিল না। ষোড়শ শতাব্দীতে (১৫১০ খৃঃ }