পাতা:বৃহৎ বঙ্গ - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(R বৃহৎ বঙ্গ রাক্ষস, দানব প্রভৃতি নামে অভিহিত করা হইত। ইহারাই উত্তরকালে বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের কলেবর বৃদ্ধি করিয়াছিলেন। সুবৃহৎ জনসাধারণের মনের ভাবের অভিব্যক্তি স্বরূপ জৈন ও বৌদ্ধ ধৰ্ম্ম এদেশে উপস্থিত হইয়াছিল। সাধারণ জনমত পূর্বেই এই দয়াধৰ্ম্ম শিখিবার জন্য প্ৰস্তুত হইয়াছিল। সেইজন্যই অতি অল্প সময়ের মধ্যে এই দুই ধৰ্ম্ম আৰ্য্যাবৰ্ত্তে এতটা প্রসার লাভ করিয়াছিল । জীবে দয়ার সূত্র আমরা মহাভারতাদি পুরাণে প্রচুর পরিমাণে পাইতেছি, উত্তরকালে এই সূত্রগুলির বিশেষ পুষ্টি ও শ্ৰীবৃদ্ধি হইয়াছিল। কপিলাবস্তু-শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি হইতে মাত্র দেড় শত ক্রোশ পশ্চিমে । ঢাকা হইতে কলিকাতা যতদূর প্রায় ততটুকু ব্যবধান । সুতরাং কপিলাবস্তুকে বৃহৎ বঙ্গের অন্তর্গত বলিলে বিশেষ দোষ হয় না। গয়া, মানভূমি, বুদ্ধদেবের মহাতীৰ্থ, ও তীর্থঙ্করদের প্রচারক্ষেত্র আমাদের বৃহৎ বঙ্গের অস্তবৰ্ত্তী ; বহুযুগ ধরিয়া এই সমস্ত দেশ বৌদ্ধ ও জৈন ধৰ্ম্মের সর্বপ্রধান তীর্থক্ষেত্র স্বরূপ ছিল | এই জন্যই এ অঞ্চলটা ব্ৰাহ্মণগণ পরিত্যাজ্য বলিয়া ঘোষণা করিয়াছিলেন কিন্তু বৈদিক যুগ হইতে এ পৰ্য্যন্ত কোন কালেই ব্ৰাহ্মণের যজ্ঞাগ্নি এ দেশে একেবারে নির্বাপিত হয় নাই । যখন উহ। নিৰ্ব্বাণোন্মুখ হইয়াছিল, তখন সেন রাজাদের মাতৃকুলের কোন আদি পুরুষ-তিনি সুরবংশীয়ই হউন, বা অপর কোন বংশীয়ই হউন-সুদূর পশ্চিম হইতে নব ব্ৰাহ্মণ্য দীক্ষিত সাগ্নিক স্বজ্ঞানুষ্ঠানে পারগ ব্ৰাহ্মণদিগকে এখানে আনিয়া তাহাদিগকে খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে এ দেশের ধৰ্ম্মণ্ডব ও সমাজগুরুরূপে অধিষ্ঠিত করাইয়াছিলেন । সেই কিনোজগত ব্ৰাহ্মণগণের একচ্ছত্র সমাজ্যের অধীন হইয়া আমরা এখন পৰ্য্যন্ত তঁহাদের বিধান শিরোধাৰ্য্য করিয়া লইতেছি । কিন্তু তেঁহাদের অধিকারে যুগে যুগে অনেক বিদ্রোহ ঘটিয়াছে ; এই বিদ্রোহীদলের সর্বজনস্বীকৃত অধিনায়ক ছিলেন সপাশ্বন্দ চৈতন্যদেব | তন্ত্ররত্নাকরে লিখিত আছে, ত্রিপুরাসুর হত হইলে বটুকভৈরব গণদেবকে জিজ্ঞাসা করেন--ত্রিপুর নিহত হওয়ার পর তাহার সত্তা জগৎ হইতে একেবারে বিলীন হইয়া গিয়াছিল,-না কোন না, কোন প্রকারে বিদ্যমান ছিল । গণদেব উত্তর করিলেন,~~ত্রিপুরানুর হত হইলে তঁাহার রূপ তিনভাবে জগতে দেপা দিয়াছিল– সেই মহাতেজা অসুরের প্রধান অংশ। শচীগর্ভে চৈতন্যরূপে প্রকট হইল, দ্বিতীয় ও তৃতীয়াংশ নিত্যানন্দ ও অদ্বৈতীরূপে আবির্ভূত হইয়াছিল। ইহারা সম্মুখযুদ্ধে শিবশক্তির বিরুদ্ধতা করিতে অসমর্থ হইয়া মানুষকে হীনবল করিবার জন্য নারীভাবের উপাসনা শিক্ষা দান করিল । “শিবধৰ্ম্মবিনাশায় লোকানাং মোহহেতবে । হিংসাৰ্থং শিবভক্তানামুপায়ণস্বজন্বহুন। অংশোনাতেন গৌরাখ্য' শচীগর্ভে বভূব সঃ। -- ততো দুরাত্মা ত্রিপুরঃ শরীরৈন্ত্রিভিরাসুরৈঃ । উপপ্লবায় লোকানাং নারীভাবমুপাদিশৎ ॥” নব-ব্ৰাহ্মণ্য-ধৰ্ম্ম যাহা আপৎকালের ধৰ্ম্মের ন্যায় সময়ের প্রয়োজন বুঝিয়া সমুদ্রযাত্ৰা নিষেধ, স্ত্রীলোকের প্রতি অবিচার এবং প্রবহমাণ স্বাভাবিক ধৰ্ম্মের গতিরোধ করিয়া জাতিভেদ ও আহার-সংযমের জন্য শত শত নিষেধবিধি দ্বারা সামাজিক ও ধৰ্ম্মজীবনে কৃত্রিমতা আনয়ন করিয়াছিল-তদ্বিরুদ্ধে সর্বপ্রধান বিদ্রোহী চৈতন্ত, ঠাহার প্রতি আক্ৰোশ ।