পাতা:বৃহৎ বঙ্গ - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জৈন ধৰ্ম্ম * ১৩১ প্ৰাচীন কীৰ্ত্তিশালার একটি বিশেষ অধ্যায় অধিকার করিয়া আছে। অথচ দুঃখের বিষয় তঁহাদের প্রাচীন শাস্ত্র ও ইতিহাসের উদ্ধার-কল্পে তাহারা বিশেষ কিছুই করেন নাই। মথুরার স্তুপ জৈনকীৰ্ত্তির প্রায় দুই সহস্ৰ বৎসরের সাক্ষা দিতেছে ; কেহ কেহ বলেন, বেদে জৈনদের যে উল্লেখ দৃষ্ট হয়-তদ্বারা অনুমিত হয় যে জৈনমত বেদের সমকালিক কিংবা তদপেক্ষাও প্ৰাচীন । যাহা হউক ২৩শ সংখ্যক তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথ ও তৎপরবর্তী মহৰীরের সময হইতেই জৈন ধৰ্ম্ম এদেশে বিশেষরূপে পরিচিত হইয়াছিল, ভারতবর্ষ ভিন্ন জৈন ধৰ্ম্মাবলম্বী অন্য কোন দেশে আছেন বলিয়া আমাদের জানা নাই। কিন্তু এদেশে-রাজপুতনা, গুজরাট, প'জাৰ এবং দক্ষিণাত্যের কোন কোন স্থানে-ইহারা সংখ্যায় প্ৰবল। ইহাদের অর্থসম্পদ ও বাণিজ্যে কৃতিত্ব ভারতবর্ষে বিশেষরূপে পরিজ্ঞাত । এই বাঙ্গলা দেশে ইহাদের প্রভাব খুবই বেশী ছিল। হিন্দুধৰ্ম্মের পুনরুত্থানে বৌদ্ধ ধৰ্ম্মের ন্যায়, জৈন ধৰ্ম্ম ও বিলুপ্ত হইয়াছিল ; তথাপি সেদিন পৰ্যন্তও জগৎ শেঠ ভ্রাতারা পৃথিবীর মধ্যে সর্বাপেক্ষা ধনশালী ছিলেন। খাস বাঙ্গালীদের মধ্যে জৈন ধৰ্ম্ম অল্পই আছে। যখন ভক্তির বন্যায় দেশ ভাসিয়া গেল, সেই সঙ্গে এদেশবাসীরা নিরীশ্বরবাদের কলঙ্ক এস্থান হইতে একবারে মুছিয়া ফেলিলেন । আমরা পূর্বেই লিখিয়াছি, হাতীর পায়ের নীচে নিষ্পেষিত হইলেও জৈন মন্দিরে প্রবেশ করিবে না-এরূপ নিষেধ-বিধি জনসাধারণের মধ্যে এক সময়ে প্রচারিত হইয়াছিল। কিন্তু মৃত্তিক-নিম্নে এ দেশের নানা স্থানে এত অধিক পরিমাণে তীর্থঙ্করদের মূৰ্ত্তি আবিষ্কৃত হইতেছে যে এক সময়ে এই ধৰ্ম্মের প্রভাব যে খুব বেশী ছিল তাহ সহজেই অনুমান করা যায়। যে সকল মন্দিরে ভগবানের স্থলে মানুষকে অধিষ্ঠিত করা হইয়াছেএবং তাহাৰুৱা জন্য আরতি জ্বলে না, ভোগ প্ৰস্তুত হয় না, প্ৰেম-ভক্তির আতিশয্যের দিনে হিন্দুগণ সেই সকল মন্দির অস্পৃশ্য মনে করিয়াছিলেন। কিন্তু যেরূপ জৈন তীর্থঙ্করদিগের বহু প্ৰাচীন মূৰ্ত্তি-স্বারা এককালে এই ধৰ্ম্মের প্রভাব প্রমাণিত হয়, তেমনই অনুমান ও প্ৰত্যক্ষ প্রমাণুঘটিত কুট তর্কে আমাদের নব্যান্যায় যে এক সময়ে বৌদ্ধ ও জৈন ন্যায়ের চিন্তাশীলতাদ্বারা বিশেষ প্রভাবান্বিত হইয়াছিল তাহাও সহজেই অনুমেয়। অনুমানকে হিন্দুগণ বিশেষরূপে আশ্রয় করিয়া একমাত্ৰ প্ৰত্যক্ষবাদের শ্রেষ্ঠত্ব খণ্ডন করিয়াছেন । এদেশের মহাস্থানে এক সময়ে জৈন ধৰ্ম্ম-নেতা ভদ্রবাহ জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, ইনি অশোকের পিতামহ সম্রাটু চন্দ্রগুপ্তের গুরু ছিলেন। এক সময় মগধ, অঙ্গ ও কৌশল রাজ্যে জৈন ধৰ্ম্ম প্ৰবল হইয়া তাহা রাষ্ট্র-কেন্দ্ৰে প্ৰাধান্য লাভ করিয়াছিল। আমাদের দেশে ধারাবাহিক ইতিহাস দুস্তপ্রাপ্য হওয়াতে, আমরা যাহা এখন দেখিতে পাই না, তাহা কোন কালেই ছিল না, বলিয়া মনে করিয়া থাকি এবং যাহা আছে-তাহো 'সূষ্টিকাল হইতেই বিদ্যমান, এরূপ সংস্কার পোষণ করি। এদেশে এককালে জৈনধৰ্ম্মের প্রাধান্ডের প্রধান প্ৰমাণ এই যে নেৰ্মিনাথ ও পার্শ্বনাথ গ্ৰন্থতি তীর্থঙ্করদের এই অঞ্চলটি এক সময়ে প্ৰধান ধৰ্ম্ম-ক্ষেত্র ছিল। পাশ্বনাথ পাহাড় (সনৎ শেখর) এখনও জৈনদের অন্যতম প্রধান কেন্দ্ৰ।