পাতা:বৌদ্ধধর্ম - হরপ্রসাদ শাস্ত্রী.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৌদ্ধ ধর্ম্ম

কোথাও বা ভূতপ্ৰেত-উপাসনার সহিত মিশিয়া গিয়াছে, কোথাও বা দেহতত্ত্ব-উপাসনার সহিত মিশিয়া গিয়াছে। কোথাও কোথাও আবার খাঁটি বুদ্ধের মত চলিতেছে, কোথাও খাটি নাগাৰ্জ্জুনের মত চলিতেছে। সুতরাং সমস্ত বৌদ্ধধর্মের একখানি পুরা ইতিহাস লেখা অত্যস্ত কঠিন ব্যাপার হইয়া উঠিয়াছে । তাহার উপর আবার ভাষার গোল। বুদ্ধের বাচনগুলি তিনি কি ভাষায় বলিয়াছিলেন জানা যায় না । তঁহার বাড়ী ছিল কৌশলের উত্তরাংশে। তিনি ধৰ্ম্মপ্রচার করিয়াছিলেন কৌশলে ও মগধে। এই দুই দেশের লোক বুঝিতে পারে এমন কোন ভাষাতে তিনি ধৰ্ম্ম-প্রচার করিয়াছিলেন । এই দুই দেশেও আবার ভিন্ন অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ছিল। তিনি সংস্কৃত ভাষায় বলেন নাই। যে সকল অতিপ্ৰাচীন বৌদ্ধ পুস্তক পাওয়া গিয়াছে, তাহা না সংস্কৃত, না মাগধী, না কোশলী ; এক রূপ মাঝামাঝি গোছের ভাষা। সংস্কৃত পণ্ডিতেরা বোধ হয় ইহারই নাম দিয়াছেন 'মিশ্র ভাষা'। একজন ইউরোপীয় পণ্ডিত ইহারই নাম দিয়াছেন “Mixed Sanskrit' । 'বিমলপ্রভা' নামে নয় শতের এক পুঁথিতে আমরা দেখিলাম যে, তৎকালে নানা ভাষায় বুদ্ধের বচন লেখা হইয়াছিল ; মগধদেশে মগধভাষায়, সিন্ধুদেশে সিন্ধু ভাষায়, বোটদেশে বোটভাষায়, চীনদেশে চীন ভাষায়, মহাচীনে মহাচীন ভাষায়, পারশ্যদেশে পারস্যভাষায়, রুহ্মদেশে রুহ্মভাষায় । আমরা জানি পারস্যদেশে মগের ধৰ্ম্ম চলিত ছিল, অর্থাৎ সেখানকার লোক অগ্নি-উপাসক ও 'জরথ্রসা' র শিষ্য ছিল। সে দেশে যে বৌদ্ধধৰ্ম্ম প্রচার ছিল, এ কথাই শুনি নাই। তাহাদেৱ ভাষায় যে, আবার বৌদ্ধবচনগুলি লিখিত হয় ছিল সে খবরও এই নূতন । রুহ্মদেশ কাহাকে বলে, জানি না, রোম হইবারই সম্ভাবনা । কারণ, বিমলপ্ৰভায় বলে, উহা নীল নদীর উত্তর । বিমলপ্ৰভায় আরও একটি নূতন খবর পাওয়া গিয়াছে। প্ৰাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষায়ও বুদ্ধদিগের অনেক সঙ্গীত লেখা হইয়াছিল এ খবর এ পর্য্যন্ত অতি অল্পলোকেই জানেন।