পাতা:বৌদ্ধ-ভারত.djvu/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম অধ্যায়

গুলি হস্তাক্ষরে গ্রন্থাকারে লিখিত হয়। বৌদ্ধধর্ম্মের অভ্যুত্থানের সময়েই এই ধর্ম্ম সিংহলে প্রচারিত হইয়াছিল এবং তখন সাধুদের স্মৃতিতেই এই ধর্ম্ম যথাযথ ভাবে মুদ্রিত ছিল, সুতরাং সিংহলী ত্রিপিটককে অসঙ্কোচে পণ্ডিতেরা প্রামাণ্য বলিয়া মানিয়া লইয়াছেন। এই ত্রিপিটকেই বৃদ্ধের বাণী অবিকৃত আকারে লিপিবদ্ধ আছে বলিয়া মনে হয়। বুদ্ধের পরিনির্ব্বাণলাভের দুই এক শত বৎসর মধ্যে ত্রিপিটক গ্রথিত হইয়াছিল। ইহার মধ্যে তাঁহার জীবন ও বাণী যে ভাবে পাওয়া যায়, তাহা বিশেষ অতিরঞ্জিত মনে করিবার কারণ নাই। অশেষ শাস্ত্রাধ্যাপক হইয়াও বুদ্ধ দেশপ্রচলিত ভাষাতেই ছোটবড়, পণ্ডিতমূর্খ সকলের নিকট তাঁহার ধর্ম্মকাহিনী বিবৃত করিতেন, সতরাং প্রাকৃত পালিভাষায় লিখিত ত্রিপিটকে বুদ্ধের উক্তি যথাযথ ভাবেই লিখিত হইয়া থাকিবে, ইহাতে কিছুমাত্র সন্দেহ করিবার হেতু নাই।

 বুদ্ধের জীবিতকালের ও তাঁহার আবির্ভাবের অব্যবহিত পরবর্ত্তী বহুশত বৎসরের ইতিহাসের বিস্তর উপকরণ এই ত্রিপিটকে পাওয়া যায় বলিয়া ত্রিপিটকের একটি বিশেষ ঐতিহাসিক মূল্য আছে। যাঁহারা বুদ্ধের ও বৌদ্ধধর্ম্মের আদিম অবিকৃত মর্ত্তি দেখিয়াই তৃপ্ত হইয়া থাকেন, তাঁহারা কেহ কেহ মহাযান বৌদ্ধধর্ম্মকে হীনযান বৌদ্ধধর্ম্ম অপেক্ষা হীন বলিতে চাহেন। তাঁহাদের সহিত সকলে একমত হইতে পারিবেন এমন আশা করা যায় না।

 মহাযান বৌদ্ধশাস্ত্রে বৌদ্ধধর্ম্মের একটি আশ্চর্য্য পরিণতি দেখা যায়। মহাযান বৌদ্ধেরা বুদ্ধের মুখের কথাগুলি যথাযথ আকারে রক্ষা করিবার নিমিত্ত চেষ্টা করেন নাই কিন্তু, তাঁহাদের সাধকগণ সাধনার অমৃতরস সেচনে সেই মূলবীজগলিকে পত্রিত, পুষ্পিত বৃক্ষে পরিণত করিয়াছেন। সেই পরিণতির ইতিবৃত্তের মধ্যে সামাজিক রাষ্ট্রীয় ইতিবৃত্তের উপকরণ না থাকিতে পারে, কিন্তু, তন্মধ্যে সাধনার ক্রমবিকাশ উজ্জ্বল আকারে প্রস্ফূর্ত্ত