বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বৌদ্ধ-ভারত.djvu/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
বৌদ্ধ-ভারত

 রেইসেন (Raisen) নামক এক সংস্কৃতজ্ঞ জাপানী পণ্ডিত ৮০৪ অব্দে চীন যাত্রা করেন এবং কালক্রমে তথাকার “বৌদ্ধ-অনুবাদ প্রতিষ্ঠানের” অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। প্রাজ্ঞ নামক জনৈক ভারতীয় ভিক্ষুর সহিত একযোগে তিনি একটি বৌদ্ধ সূত্রের অনুবাদ সম্পূর্ণ করেন। এই গ্রন্থের জাপানী নাম “শিঞ্চি কো আঙ্গো।” ইহা এখনও জাপানী বৌদ্ধদের অন্যতম প্রামাণ্য গ্রহ। জাপান সেই পুরাকালেই ভারতের ধর্ম্ম ও ভারতের সভ্যতা গ্রহণ করিয়াছিলেন। সেই প্রাচীনকালে জাপানীসম্রাট্ সাগার পত্র কুমার তাকাওকা জাপান হইতে ভারতবর্ষ যাত্রা করিয়াছিলেন। পথিমধ্যে কোচিন-চীনের অন্তর্গত লাওস নামক স্থানে রোগাক্রান্ত হইয়া তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন।

 খৃষ্টীয় ৩৭২ অব্দে চীন হইতে বৌদ্ধধর্ম্ম কোরিয়ায় প্রচারিত হয়। চীন হইতে খৃষ্টীয় ৪র্থ ও ৫ম শতাব্দীতে বৌদ্ধধর্ম্ম কোচীন,ফরমোজা, মোঙ্গলিয়া এবং অপর নানারাজ্যে প্রচারিত হইয়াছিল।

 বৌদ্ধ ধর্ম্মের অভ্যুত্থানের পরে অল্পকাল মধ্যেই ঐ ধর্ম্ম নেপালে প্রচারিত হইয়া থাকিবে। কিন্তু খৃষ্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীর পূর্ব্বে এই ধর্ম্ম তথাকার রাজকীয় ধর্ম্মে পরিণত হয় নাই। ৬৩২ খৃষ্টাব্দে তিব্বতের প্রথম বৌদ্ধরাজ বৌদ্ধধর্ম্মশাস্ত্রীয় গ্রন্থসংগ্রহার্থ নেপালে লোক পাঠাইয়াছিলেন।

 বৌদ্ধধর্ম খৃষ্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যে এশিয়া মহাদেশের সকল রাজ্যে এবং আফ্রিকা ও ইয়ুরোপের কোনো কোনো দেশে প্রচারিত হইয়াছিল। এই ধর্ম্ম নানাদেশে নানাজাতির মধ্যে বিভিন্ন প্রকার মূর্ত্তি পরিগ্রহ করিয়াছে। চীন ও জাপানে বৌদ্ধধর্ম্ম এখনও রাষ্ট্রীয় ধর্ম্মরূপে রহিয়াছে। কিন্তু একই দেশে নানা সম্প্রদায়ের মধ্যে এই ধর্ম্ম নানা আকারে দৃষ্ট হইয়া থাকে।

 বৌদ্ধধর্ম্মের উদারনীতি ও মৈত্রী একসময়ে যে আলোকছটার বিকাশ করিয়াছিল, সেই আলোকে সমস্ত এশিয়া মহাদেশ আলোকিত হইয়াছিল। এই ধর্ম্ম যে, এশিয়া মহাদেশে সভ্যতার বিকাশে অসামান্য প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল তাহাতে অনুমাত্র সন্দেহ নাই।