পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১৬১

 উদয়াদিত্য নিশ্বাস ফেলিয়া কহিলেন—“তবে যাই—আমি কারাগারে ফিরিয়া যাই।”

 বসন্তরায় তাঁহার হাত চাপিয়া ধরিয়া কহিলেন, “কেমন যাইবি যা দেখি। আমি যাইতে দিব না।”

 উদয়াদিত্য কহিলেন, “দাদা মহাশয়, এ হতভাগ্যকে লইয়া কেন বিপদকে ডাকিতেছ। আমি যেখানে থাকি সেখানে কি তিলেক শান্তির সম্ভাবনা আছে?”

 বসন্তরায় কহিলেন—“দাদা তাের জন্য যে বিভাও কারাবাসিনী হইয়া উঠিল। এই তাহার নবীন বয়সে সে কি তাহার সমস্ত জীবনের সুখ জলাঞ্জলি দিবে?” বসন্তরায়ের চোখ দিয়া জল পড়িতে লাগিল।

 তখন উদয়াদিত্য তাড়াতাড়ি কহিলেন, “তবে চল চল দাদা মহাশয়।” সীতারামের দিকে চাহিয়া কহিলেন, “সীতারাম, প্রাসাদে তিন খানি পত্র পাঠাইতে চাই।”

 সীতারাম কহিল—“নৌকাতেই কাগজকলম আছে, আনিয়া দিতেছি। শীঘ্র করিয়া লিখিবেন অধিক সময় নাই।”

 উদয়াদিত্য পিতার কাছে মার্জ্জনা ভিক্ষা করিলেন। মাতাকে লিখিলেন;—“মা, আমাকে গর্ব্ভে ধরিয়া তুমি কখনাে সুখী হইতে পার নাই। এইবার নিশ্চিন্ত হও মা—আমি দাদা মহাশয়ের কাছে যাইতেছি, সেখানে আমি সুখে থাকিব, স্নেহে থাকিব, তােমার কোন ভাবনার কারণ থাকিবে না।” বিভাকে লিখিলেন “চিরায়ুষ্মতীযু—তােমাকে আর কি লিখিব—তুমি জন্ম জন্ম সুখে থাক—স্বামিগৃহে গিয়া সুখের সংসার পাতিয়া সমস্ত দুঃখ কষ্ট ভুলিয়া যাও!” লিখিতে লিখিতে উদয়াদিত্যের চোখ জলে পূরিয়া আসিল। সীতারাম সেই চিঠি তিনখানি এক জন দাঁড়ির হাত দিয়া প্রাসাদে পাঠাইয়া দিল। সকলে নৌকাতে উঠিতেছেন—এমন সময়ে দেখিলেন কে এক জন ছুটিয়া তাহাদের দিকে আসিতেছে। সীতারাম