পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৮
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

একবারে ভাঙিয়া গিয়াছে—তাহার সমস্ত উপায় সমস্ত উদ্দেশ্য একবারে ভূমিসাৎ হইয়াছে। এখন রুক্ষ্মিণীর আর সেই তীক্ষ্ণ-শাণিত হাস্য নাই, বিদ্যুদ্বর্ষী কটাক্ষ নাই, তাহার সেই ভাদ্র মাসের জাহ্নবীর ঢলঢল তরঙ্গ-উচ্ছ্বাস নাই—রাজবাটির যে সকল ভৃত্যেরা তাহার কাছে আসিত, তাহাদের সহিত ঝগড়া করিয়া, তাহাদিগকে গালাগালি দিয়া ভাগাইয়া দিয়াছে। দেওয়ানজির জ্যেষ্ঠ পুত্রটি সে দিন পান চিবাইতে চিবাইতে তাহার সহিত রসিকতা করিতে আসিয়াছিল, রুক্মিণী তাহাকে ঝাঁটাইয়া তাড়াইয়াছে। এখন আর কেহ তাহার কাছে ঘেঁসিতে পারে না। পাড়ার সকলেই তাহাকে ভয় করে।

 সীতারাম কুটীর হইতে বাহির হইয়া আসিয়া ভাবিল—মঙ্গলা যুবরাজের পলায়ন বৃত্তান্ত সমস্তই অবগত হইয়াছে। অতএব ইহার দ্বারাই সব ফাঁস হইবে—সর্ব্বনাশীকে গলা টিপিয়া মারিয়া আসিলাম না কেন! যাহা হউক—আমার আর যশােহরে এক মুহূর্ত্ত থাকা শ্রেয় নয়। আমি এখনই পালাই। সেই রাত্রেই সীতারাম সপরিবারে যশােহর ছাড়িয়া রায়গড়ে পালাইল।

 শেষ রাত্রে মেঘ করিয়া মুষলধারে বৃষ্টি আরম্ভ হইল—আগুনও ক্রমে নিবিয়া গেল। যুবরাজের মৃত্যুর জনরব প্রতাপাদিত্যের কানে গেল। শুনিয়া তৎক্ষণাৎ প্রতাপাদিত্য বহির্দ্দেশে তাঁহার সভাভবনে আসিয়া বসিলেন। প্রহরীদের ডাকাইয়া আনিলেন, মন্ত্রী আসিল, আর দুই এক জন সভাসদ আসিল। একজন সাক্ষ্য দিল, যখন আগুন ধু ধু করিয়া জ্বলিতেছিল, তখন সে যুবরাজকে জানালার মধ্য হইতে দেখিয়াছে। আর কয়েক জন কহিল, তাহারা যুবরাজের চীৎকার শুনিতে পাইয়াছিল। আর একজন, যুবরাজের গৃহ হইতে তাঁহার গলিত দগ্ধ তলােয়ারের অবশিষ্টাংশ আনিয়া উপস্থিত করিল। প্রতাপাদিত্য-জিজ্ঞাসা করিলেন—“খুড়া কোথায়?” রাজবাটী অনুসন্ধান করিয়া তাঁহাকে খুঁজিয়া পাইল