পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
২৫

কাজে আমার কোন মতেই প্রবৃত্তি হইল না। কারণ, আমাদের কবি বলেন, রাজার আদেশে প্রভুর আদেশে সমস্ত পৃথিবী ধ্বংস করিতে পার কিন্তু সাবধান, স্বর্গের এক কোণও ধ্বংস করিও না। এখন গরীব, মহারাজের শরণাপন্ন হইল। দেশে ফিরিয়া গেলে আমার সর্ব্বনাশ হইবে। আপনি রক্ষা না করিলে আমার আর উপায় নাই!” বলিয়া যোড়হাত করিয়া দাঁড়াইল।

 বসন্তরায় অবাক হইয়া দাঁড়াইয়া রহিলেন। কিছুক্ষণ পরে পাঠানকে কহিলেন—“তোমাকে একটি পত্র দিতেছি তুমি রায়গড়ে চলিয়া যাও। আমি সেখানে ফিরিয়া গিয়া তোমার একটা সুবিধা করিয়া দিব।”

 উদয়াদিত্য কহিলেন “দাদা মহাশয়, আবার যশোহরে যাইবে না কি?”

 বসন্তরায় কহিলেন “হাঁ ভাই!”

 উদয়াদিত্য অবাক হইয়া কহিলেন “সে কি কথা!”

 বসন্তরায়—“প্রতাপ আমার ত আর কেহ নয়, সহস্র অপরাধ করুক, সে আমার নিতান্তই স্নেহভাজন! আমার নিজের কোন হানি হইবে বলিয়া ভয় করি না। আমি ত ভাই, ভবসমুদ্রের কুলে দাড়াইয়া; একটা ঢেউ লাগিলেই আমার সমস্ত ফুরাইল। কিন্তু এই পাপকার্য্য করিলে প্রতাপের ইহকালের ও পরকালের যে হানি হইত, তাহা ভাবিয়া কি আমি নিশ্চিন্ত থাকিতে পারি? তাহাকে আলিঙ্গন করিয়া একবার সমস্ত বুঝাইয়া বলি।”

 বলিতে বলিতে বসন্তরায়ের চোখে জল আসিল। উদয়াদিত্য দুই হস্তে তাঁহার চক্ষু আচ্ছাদন করিলেন।

 এমন সময়ে কোলাহল করিতে করিতে বসন্তরায়ের অনুচরগণ ফিরিয়া আসিল।

 “মহারাজ কোথায়? মহারাজ কোথায়?”