পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭০
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

 যুবরাজ কহিলেন, “অন্তঃপুরের দ্বার খুলিতেছি।”

 প্রহরী কহিল,—“কাল মহারাজের কাছে কি জবাব দিব?”

 উদয়াদিত্য কহিলেন, “বলিস্, যুবরাজ বলপূর্ব্বক আমাদিগকে পরাভূত করিয়া অন্তঃপুরের দ্বার খুলিয়াছেন। তাহা হইলে খালাস পাইবি।”

 উদয়াদিত্য অন্তঃপুর হইতে বাহির হইয়া যে ঘরে জামাতার লােক জন থাকে সেইখানে উপস্থিত হইলেন। সে ঘরে কেবল রামমােহন ও রমাই ভাঁড় ঘুমাইতেছিল, আর বাকি সকলে আহারাদি করিয়া নৌকায় গিয়াছে। যুবরাজ ধীরে ধীরে রামনােহনকে স্পর্শ করিলেন। সে চমকিয়া লাফাইয়া উঠিল। বিস্মিত হইয়া কহিল—“এ কি যুবরাজ?” যুবরাজ কহিলেন “বাহিরে এস।” রামমােহন বাহিরে আসিল। রামমােহনকে যুবরাজ সমস্ত কহিলেন।

 তখন রামমােহন মাথায় চাদর বাঁধিয়া লাঠি বাগাইয়া ধরিল, ক্রোধে স্ফীত হইয়া কহিল, “দেখিব লছমন্ সর্দ্দার কত বড় লােক। যুবরাজ আমাদের মহারাজকে একবার কেবল আমার কাছে আনিয়া দিন। আমি একা এই লাঠি লইয়া একশ জন লােক ভাগাইতে পারি!”

 যুবরাজ কহিলেন, “সে কথা আমি মানি, কিন্তু যশোহরের রাজপ্রাসাদে একশত অপেক্ষা অনেক অধিক লােক আছে! তুমি বলপূর্ব্বক কিছু করিতে পারিবে না। অন্য কোন উপায় দেখিতে হইবে।”

 রামমােহন কহিল, “আচ্ছা, মহারাজকে একবার আমার কাছে আনুন, আমার পাশে তিনি দাঁড়াইলে আমি নিশ্চিন্ত হইয়া উপায় ভাবিতে পারি। তখন অন্তঃপুরে গিয়া উদয়াদিত্য রামচন্দ্রকে আহ্বান করিলেন। তিনি এবং তাহার সঙ্গে সকলেই আসিল।

 রামচন্দ্র রামমােহনকে দেখিয়াই ক্রোধে অভিভূত হইয়া কহিলেন— “তােকে আমি এখনি ছড়াইয়া দিলাম—তুই দূর হইয়া যা’ তুই পুরানাে