পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
৭৯

করিব, তুমি আমার কথা রাখ। এই লও আমার কাছে যাহা আছে, এই দিলাম।”

 ভাগবত তৎক্ষণাৎ হাত বাড়াইল, ও সেই টাকাগুলি মুহূর্ত্তের মধ্যে তাহার ট্যাঁকে আশ্রয় লাভ করিল। বসন্তরায় কিয়ৎ পরিমাণে নিশ্চিন্ত হইয়া ফিরিয়া গেলেন।

 প্রতাপাদিত্যের নিকট প্রহরীদ্বয়ের ডাক পড়িয়াছে। মন্ত্রী তাহাদিগকে সঙ্গে করিয়া লইয়া গেলেন। প্রতাপাদিত্য তখন তাঁহার উচ্ছ্বসিত ক্রোধ দমন করিয়া স্থির গম্ভীর ভাবে বসিয়া আছেন। প্রত্যেক কথা ধীরে ধীরে স্পষ্টরূপে উচ্চারণ করিয়া কহিলেন, “কাল রাত্রে অন্তঃপুরের দ্বার খােলা হইল কি করিয়া?”

 সীতারামের প্রাণ কাঁপিয়া উঠিল, সে যােড়হস্তে কহিল, “দোহাই মহারাজ, আমার কোন দোষ নাই।”

 মহারাজ ভ্রূকুঞ্চিত করিয়া কহিলেন, “সে কথা তােকে কে জিজ্ঞাসা করিতেছে?”

 সীতারাম তাড়াতাড়ি কহিল, “আজ্ঞা না, বলি মহারাজ; যুবরাজ —যুবরাজ আমাকে বলপূর্ব্বক বাঁধিয়া অন্তঃপুর হইতে বাহির হইয়াছিলেন।” যুবরাজের নাম তাহার মুখ দিয়া কেমন হঠাৎ বাহির হইয়া গেল। ঐ নামটা কোন মতে করিবে না বলিয়া সে সর্ব্বাপেক্ষা অধিক ভাবিয়াছিল, এই নিমিত্ত গােলমালে ঐ নামটাই সর্ব্বাগ্রে তাহার মুখাগ্রে উপস্থিত হইল। একবার যখন বাহির হইল তখন আর রক্ষা নাই।

 এমন সময় বসন্তরায় শুনিলেন, প্রহরীদের ডাক পড়িয়াছে। তিনি ব্যস্তসমস্ত হইয়া প্রতাপাদিত্যের কক্ষে গিয়া উপস্থিত হইলেন। তখন সীতারাম কহিতেছে “যুবরাজকে আমি নিষেধ করিলাম তিনি শুনিলেন না।”