পাতা:ব্রজবিলাস - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিজ্ঞাপন।

প্রতিজ্ঞা করিলেন, ‘যাহা করিয়াছি, তাহার আর চারা নাই অতঃপর, আর আমি, প্রাণান্তেও, পর পুরুষে উপগত হইব না’। সে দিন, সন্ধ্যার পর, তিনি, পুর্ব্ববৎ, শিরোমণি মহাশয়ের আবাসে উপস্থিত হইয়া, যথাবৎ আর আর পরিচর্যা করিলেন; কিন্তু, অন্যান্য দিবসের মত, তাঁহার চরণসেবার জন্য, যথাসময়ে, তদীয় শয়নগৃহে প্রবেশ করিলেন না।

 শিরোমণি মহাশয়, কিয়ৎ ক্ষণ, অপেক্ষা করিলেন। অবশেষে, বিলম্ব দর্শনে, অধৈর্য্য হইয়া, তাহার নামগ্রহণ পূর্বক, বারংবার আহ্বান করিতে লাগিলেন। সেবাদাসী, গৃহমধ্যে প্রবিষ্ট না হইয়া, দ্বারদেশে দণ্ডায়মান রহিলেন; এবং, গলবস্ত্র ও কৃতাঞ্জলি হইয়া, গলদশ্রু লোচনে, শোকাকুল বচনে কহিলেন, “প্রভো। কৃপা করিয়া, আমায় ক্ষমা করুন। সিমুল গাছের উপাখ্যান গুনিয়া, আমি ভয়ে মরিয়া রহিয়াছি; আপনকার চরণসেবা করিতে, আর আমার, কোনও মতে, প্রবৃত্তি ও সাহস হইতেছে না। না জানিয়া যাহা করিয়াছি, তাহা হইতে কেমন করিয়া নিস্তার পাইব, সেই ভাবনায় অস্থির হইয়াছি’।

 সেবাদাসীর কথা শুনিয়া, পণ্ডিতচুড়ামণি শিরোমণি মহাশয় শয্যা হইতে গাত্রোখান করিলেন; এবং, দ্বারদেশে আসিয়া, সেবাদাসীর হস্তে ধরিয়া, সহাস্য মুখে কহিলেন, “আরে পাগলি! তুমি এই ভয়ে আজ শয্যায় যাইতেছ না? আমরা, পুর্ব্বাপর, যেরূপ বলিয়া আসিতেছি, আজও সেইরূপ বলিয়াছি। সিমুল গাছ, পূর্ব্বে, ঐরূপ ভয়ঙ্কর ছিল, যথার্থ বটে; কিন্তু, শরীরের ঘর্ষণে ঘর্ষণে, লৌহময় কণ্টক সকল ক্রমে ক্ষয় পাওয়াতে, সিমুল গাছ তেল হইয়া গিয়াছে; এখন, আলিঙ্গন করিলে, সর্ব্ব শরীর শীতল ও পুলকিত হয়”। এই বলিয়া, অভয়প্রদান ও প্রলোভনদর্শন পূর্ব্বক, শয্যায় লইয়া গিয়া, গুণমণি শিরোমণি মহাশয় তাঁহাকে, পুর্ব্ববৎ, চরণসেবায় প্রবৃত্ত করিলেন।