পাতা:ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস - দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
তৃতীয় উপদেশ।

না, সেই রূপ মন প্রকৃতিস্থ না থাকিলে আত্মাও সুস্থতা লাভ করিতে পারে না। আমাদের আত্মা যদি অসুস্থ ও মলিন রহিল, তবে যিনি আমাদের আশার শেষ স্থল, প্রীতির পরমাস্পদ, তৃপ্তির একই তুমি, তাঁহাকে লাভ করিয়া আমরা সেই পরিশুদ্ধ আনন্দের আস্বাদ কি প্রকারে পাইতে পারি? তাহাতে সে আনন্দ উপভোগের প্রার্থনাও জন্মে না। পাপী ও পুণ্যাত্মা পরম্পর এত ভিন্ন, যেমন রোগী ও সুস্থ পুরুষ। বিকারী রোগী যেমন ক্রমিক জল পান করিয়াও পরিতোষ পায় না, সেই রূপ পাপী ব্যক্তি সম্ভোগসলিলে অনবরত বিলাস করিয়াও পরিতৃপ্ত হয় না। পাপেতে যতই লিপ্ত থাকা যায়, পাপ আপন অনুচরকে ততই আকর্যণ করিতে থাকে। পাপের সহিত বিশেষ রূপে প্রণয় বন্ধন হইলে, আর তাহার মলিনত্ব দেখা যায় না। পাপপঙ্কে নিমগ্ন থাকাই এখানকার নরক ভোগ। পাপীদিগের নিকটে ঈশ্বর উগ্র মূর্ত্তি ধারণ করেন—পাপীর পক্ষে তিনি মহদ্ভয়ং বজমুদ্যতং— ঈশ্বরের অপরাধী অসৎ সন্তান তাঁহার প্রেরিত দণ্ড ভোগ করিয়া তাঁহার পিতৃস্নেহ উপলব্ধি করিতে পারে না। কিন্তু তাঁহার দণ্ড স্নেহ সমন্বিত। তিনি আমাদিগকে আপন ক্রোড়ে আকর্ষণ করিবার জন্যই দণ্ড বিধান করেন। পাপের উপযুক্ত দণ্ড পাইয়া আমরা পাপ হইতে বিরত থাকি—ক্ষীণপাপ হইয়া তাঁহার পবিত্র সহবাসের প্রার্থনা করি এবং তাঁহাকে লাভ করিয়া নির্ম্মলানন্দ উপভোগ করি, ইহাই তাঁহার অভিপ্রায়।