পাতা:ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস - দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরলোক।
৫৫

দিতে হয়—ত্যাগ স্বীকার করিতে হয়; প্রবৃত্তির সহিত সংগ্রাম করিতে হয়; অথচ সেই সকল কার্য্যের পৃথিবীর সঙ্গে তাদৃশ যোগ নাই —তাহাতে সংসারেরও উন্নতি হয় না—ধন মানও উপার্জ্জন হয় না—স্বার্থপরতাও তৃপ্ত হয় না; তখন ইহাই প্রতীতি হয় যে আমি কেবল এই পৃথিবী লোকেরই জীব নহি, শ্রেষ্ঠ লোকের উপযুক্ত জ্ঞান ও ধর্ম্ম শিক্ষার জন্য এই পৃথিবীতে কিছুকাল অবস্থিতি করিতেছি। পশুদিগের তো এমন একটি অঙ্গ নাই, এমন একটি প্রবৃত্তি মাই, এমন কিছুই নাই, যাহা ইহকালের সম্যক্ উপযোগী না হইয়াছে মনুষ্যেরই এরূপ কেন? জন সমাজের শৃঙ্খলা রক্ষার নিমিত্তে আরো নানা উপায় হইতে পারিত—পরমেশ্বর মনুষ্যকে পশুদিগের ন্যায় কেবল প্রবৃত্তির বশীভূত করিতে পারিতেন; তিনি তাহার স্বার্থপরতাকে আরো দূরদর্শী করিয়া জনসমাজের মর্য্যাদা রক্ষা করিতে পারিতেন। কিন্তু মানুষ্য কেবল ইহকালের জীব নহে বলিয়া জগদীশ্বর এরূপ বিধান করেন নাই। ধর্ম্মের নিঃস্বার্থ ভাব পৃথিবীর ভাব হইতে অতি উচ্চ—সংসারের ক্ষুদ্র বিষয় সকলের একান্ত অনুপযোগী। মনুষ্য ধর্ম্মের সহিত নিষ্কাম মিত্রতা বন্ধন করিলে আপনার বৈষয়িক ক্ষতি বৃদ্ধির আশা ভয়ে বিশেষ ব্যাকুল হয়েন না, ধর্মানুষ্ঠানেই আপনাকে পবিত্র করিয়া পৃথিবী হইতেই উচ্চতর ধামের উপযুক্ত করেন। এখান হইতে আমরা পরকালের আভাস প্রাপ্ত হইতেছি। আমরা জীবদ্দশাতেই ধর্ম্মের অনুরোধে বিষয়ের প্রতিকূলে গিয়া মুক্তাবস্থা কতক উপলব্ধি করিতে পারিতেছি।