পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
অক্ষয়চন্দ্র সরকার
অক্ষোভ্য

চন্দ্রের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ মাত্র তিনখানি—‘উদাসিনী’ (১৮৭৪ খ্র); ‘সাগর-সঙ্গমে’ (১৮৮১ খ্ৰী); ‘ভারতগাথা' (১৮৯৫ খ্র)।

দ্র সাহিত্য-সাধক চরিতমালা ৭৬, ১৩৫৬ বঙ্গাব্দ।

অক্ষয়চন্দ্র সরকার (১৮৪৬-১৯১৭ খ্র) প্রসিদ্ধ লেখক ও সমালােচক। ইনি চুচুড়ার সম্ভ্রান্ত কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা গঙ্গাচরণ সরকার মুনসেফ ও পরে সবজজ ছিলেন। ১৮৬৮ খ্ৰী আইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া অক্ষয়চন্দ্র বহরমপুরে ওকালতি আরম্ভ করেন। এই সময়ে বঙ্কিমচন্দ্র ‘বঙ্গদর্শন’ প্রকাশ করেন (১৮৭২ খ্রী)। অক্ষয়চন্দ্রের প্রথম রচনা ‘উদ্দীপনা ইহাতে প্রকাশিত হয়। বহরমপুরে পাঁচ বৎসর ওকালতি করিবার পর মাতার রােগবৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি চুচুড়ায় ফিরিয়া যাইতে বাধ্য হন এবং রাজনীতি-আলােচনা ও হিন্দুসমাজের ভিত্তি দৃঢ় করিবার উদ্দেশ্যে ১৮৭৩ খ্ৰী চুচুড়া হইতে ‘সাধারণী’ নামে সাপ্তাহিক বাহির করেন। ইহা ১৭ বৎসর পরিচালিত হইয়াছিল। নবজীবন’ (১৮৮৪-১৮৮৯ খ্রী) পত্রিকারও তিনি প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক। উভয় পত্রিকাতেই সমকালীন প্রসিদ্ধ সাহিত্যিকগণের রচনা থাকিত। সারদাচরণ মিত্রের সহযােগিতায় অক্ষয়চন্দ্র প্রাচীন কাব্য -সংগ্রহ প্রকাশ করেন। তাঁহার রচিত যুক্তাক্ষরহীন ‘গােচারণের মাঠ’ বিখ্যাত শিশুপাঠ্য কাব্য। তিনি বঙ্গীয়-সাহিত্য-সম্মিলনের ষষ্ঠ অধিবেশনের মূল সভাপতি, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সহকারী সভাপতি এবং ভারতসভা বা ইণ্ডিয়ান অ্যাসােসিয়েশনের প্রথম যুগ্ম সহকারীসম্পাদক ছিলেন। —

সাহিত্য-সাধক-চরিতমালা ৩৯, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ।

অক্ষয়তৃতীয়া বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া। অতি পুণ্যদিন বলিয়া পরিগণিত। রঘুনন্দনের তিথিতত্ত্ব হইতে জানা যায়, অক্ষয়তৃতীয়ায় সত্যযুগের প্রারম্ভ, জনার্দন এই দিন যব সৃষ্টি করিয়াছিলেন এবং গঙ্গাকে দেবলােক হইতে মর্ত্যে অবতরণ করাইয়াছিলেন। সেই জন্য এই দিনে দানাদি কার্যে অক্ষয় পুণ্যলাভ হইয়া থাকে। এই দিন শ্রীকৃষ্ণের চন্দনযাত্রা; এই উপলক্ষে কৃষ্ণকে চন্দন দ্বারা অনুলিপ্ত করিবার বিধান আছে। অনেকে এই দিন। জলপূর্ণ কুম্ভ দান করেন। মহিলারা অক্ষয়তৃতীয়া ব্ৰতানুষ্ঠান প্রসঙ্গে লক্ষ্মীনারায়ণ পূজার ব্যবস্থা এবং জলপূর্ণ কুম্ভ ও ভােজ্য দান করিয়া থাকেন। কোনও কোনও ব্যবসায়ী অক্ষয়তৃতীয়ায় নববর্ষারম্ভ এবং হালখাতা করেন।

চিন্তাহরণ চক্রবর্তী

অক্ষয়বট প্রলয়কালে বিষ্ণু বটপত্রে অধিষ্ঠান করেন শাস্ত্রে এইরূপ উল্লেখ আছে। ইহা হইতে এইরূপ বিশ্বাস গড়িয়া উঠিয়াছে যে বটগাছের মৃত্যু নাই এবং তাহা পবিত্র ও পূজার যােগ্য। প্রয়াগ, গয়া, পুরী, ভুবনেশ্বর প্রভৃতি তীর্থক্ষেত্রে এক একটি বটবৃক্ষ আছে। সাধারণের বিশ্বাস এইগুলি প্রাচীন এবং এইগুলির মৃত্যু নাই; সুতরাং বৃক্ষগুলি অক্ষয়। এই সকল বৃক্ষে জলসেক করিলে অক্ষয় ফল লাভ হয়। প্রয়াগের অক্ষয়বট এখন কেল্লার ভিতর পড়িয়াছে। ইহার চতুষ্প ভরাট হইবার ফলে ইহা সমতল হইতে নিম্নে অবস্থিত। ঐতিহাসিক আবদুল কাদের লিখিয়াছেন যে, সম্রাট আকবরের সময় হিন্দুরা এই বৃক্ষের মূল হইতে গঙ্গায় ঝাপ দিয়া প্রাণত্যাগ | করিত। সে সময় গঙ্গা বৃক্ষের নিকট দিয়া প্রবাহিত হইত।


অক্ষর (syllable) ভাষাবিজ্ঞানে পদ-উচ্চারণে একক | মান (unit)। যেমন ‘রাম’ সংস্কৃত ভাষার উচ্চারণে | ‘রা+ম’ (দুই অক্ষর ), বাংলা ভাষার উচ্চারণে ‘রাম ( এক অক্ষর)। একটি অথবা দুইটি স্বরধ্বনি লইয়া অক্ষর হইতে পারে। যেমন ‘এ’ ‘বউ’। স্বরধ্বনিযুক্ত এক বা | একাধিক ব্যঞ্জনধ্বনি লইয়া অক্ষর হইতে পারে। যেমন, ‘প্রােৎসাহিত’ ( প্রােৎ+সা+হি+ত)=প্রওৎ+ আ +হই+অ, অনৈতিহাসিক (অ+নৈ+তি+হা+ সি, বাংলা উচ্চারণে) = অ+ন্+ই+হ অ+ সই। | ভাষাবিজ্ঞানে অক্ষর দ্বিবিধ, সংবৃত ( closed) ও বিবৃত (open)। সংবৃত অক্ষর ব্যঞ্জনান্ত, বিবৃত অক্ষর স্বরান্ত। বিবৃত অক্ষরে হ্রস্ব স্বর থাকিলে এক মাত্রা | (mora ), দীর্ঘ স্বর থাকিলে দুই মাত্রা। সংবৃত অক্ষরে সর্বদা দুই মাত্রা।

সুকুমার সেন

অক্ষোভ্য পঞ্চ ধ্যানীবুদ্ধের অন্যতম। প্রায় সকল বৌদ্ধ তান্ত্রিক গ্রন্থেই ইহার উল্লেখ ও বর্ণনা পাওয়া যায়। ইহাকে বিজ্ঞানস্কন্ধস্বভাব ও বকুলী বলা হইয়া থাকে। মামকী ইহার প্রজ্ঞা। বৌদ্ধ সংস্কৃতির সহিত সম্পর্কযুক্ত প্রায় প্রত্যেক দেশেই নানা আকারের অক্ষোভ্যের বহু মূর্তি ও চিত্র পাওয়া গিয়াছে। অক্ষোভ্যের বাহন এক জোড়া হস্তী এবং চিহ্ন বজ্র। তিব্বতী ও চীনা বৌদ্ধদিগের নিকট অক্ষোভ্য বিশেষ সমাদৃত। |

অক্ষোভ্যের বর্ণ নীল এবং অক্ষোভ্য হইতে উদ্ভুত দেবতাদিগের মধ্যে ‘হেরুক’ অগ্রগণ্য।

Advayavajra Samgraha, Baroda, 1927 ;