পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

অগ্নিপূজা। হইয়াছে। তিনি অহুরের সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, তিনি পুথ বা মজদা, তিনি বিশ্বকে নবজন্ম দান করেন। তিনি দৈব জগতে অষ ( Asha) অথবা ঋতের প্রতীক। আতর বিধিমতে ধর্মবিশ্বাসের মুখ্যবস্তুরূপে স্বীকৃত হইলেন এবং নিয়মানুষ্ঠানে ও সর্ববিধ ক্রিয়াকর্মের মূলাধার রূপে পরিগৃহীত হইলেন। পরিবারসমূহে অগ্নিকুণ্ডে আতর রক্ষিত হইত এবং রাজা তাঁহার রাজপ্রাসাদ অপদানে ( Apadana ) এই আতকে প্রজ্বলিত রাখিতেন। খ্রীষ্টপূর্ব ৪৫০ অব্দে হেয়ােডটাস যথার্থই বলিয়াছিলেন যে । ইরান দেশে মূর্তি বা উপাসনাগৃহ নাই। একটি বহনযােগ্য আধারে অগ্নিবেদীকে শােভাযাত্রা করিয়া লওয়া হইত। পার্থিয়ান যুগে (১৫০ খ্রীষ্টপূর্ব ) পর্যন্ত উৎসবাদির সময় সর্বসাধারণের উপাসনার নিমিত্ত অগ্নিকে উন্মুক্ত স্থানে রাখা হইত। মাত্র সাসানীয় যুগে ২২৫ খ্রীষ্টাব্দে এই অগ্নিকে দুর্গের ছাদে স্থাপন করা হয়। ক্রমে জনসাধারণের উপাসনার জন্য গৃহ নির্মাণ করিয়া আতর রক্ষার ব্যবস্থা হইল। পরিবারস্থিত যে অগ্নির নিকট স্বাস্থ্য, সন্ততি এবং পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে প্রার্থনাদি করা হইত তাহার নাম প্রথম আধুনিক যুগে হইল দদগাহ, (ব। ধর্মসম্মত)। ইহার অপেক্ষাকৃত উচ্চশ্রেণীতে যে আতর জনসাধারণকর্তৃক উৎসবাদিতে পূজিত হইতেন তাহার নাম ছিল আতর গাহ, ( পার্বণসম্মত) এবং সর্বোচ্চ শ্রেণীতে যে আতর জাতীয় বিজয়ােৎসবে অথবা রাজ্যাভিষেকের সময় পূজা পাইতেন তাহার নাম পৌরাণিক বীরগণের নামের অনুকরণে বৃত্ৰহণ, বৃত্ৰগ্ন, বেরেথ বা বহরাম ইত্যাদি রাখা হইত। এই নিয়মে নগরের নামও আতর পাত, বা আতরাবাদ হইয়াছিল। অগ্নিগৃহগুলিতে বিদ্যালয় গ্রন্থাগার অর্থকোষ ও বিচারশালা ইত্যাদি স্থাপিত হইত। মূলতঃ বলিতে গেলে আথবণগণ ( আতর বা অগ্নির রক্ষকগণ বা পরিচর্যাকারী ) যাহারা ঐরয়, (আর্য ) জাতিকে তাহাদের অইরান ( = ইরান) -রূপী বিশ্রামভূমি বা উপনিবেশে আনিয়াছিলেন, তাহারা অগ্নিকেন্দ্রিক যে সংস্কৃতির সৃষ্টি করেন তাহা মানব-সভ্যতার ইতিহাসে অতি বিচিত্র অধ্যায়। (ঘ) আতর-এর পার্শী পুরােহিতগণ— খ্ৰীষ্টীয় ৬৫১ অব্দে আরব কর্তৃক ইরান বিজয়ের পরই জরথুস্ত্র সম্প্রদায়ের প্রাচীন অগ্নিপূজার অনুষ্ঠানপদ্ধতি, আদর্শ, তত্ত্বচিন্তা ও বিশ্বাস অবিচ্ছিন্ন ধারায় রক্ষা করিবার উদ্দেশ্যে পলাতক পাশীগণ ভারতবর্ষে চলিয়া আসিয়াছিলেন। এদেশে বসবাস করিবার পাঁচ বৎসরের মধ্যেই ৭৯০ খ্রীষ্টাব্দে আতর বহরামকে বিশিষ্টরূপেই ইরানশাহ নাম দিয়া স্থাপিত করা

________________

অগ্নিহােত্র হয়। ঐ অগ্নি গুজরাটের উদাড়ােতে এখনও প্রজ্বলিত রহিয়াছে। শাস্ত্রমতে এই সম্প্রদায়কে একেশ্বরবাদী বলা হয়, কবি ফিরদৌসী পারস্যের জাতীয় মহাকাব্য শাহনামাতেও তাহাই বলিয়াছেন। তথাপি প্রচলিত বিশ্বাসে কতকটা অশুদ্ধভাবে ইহাদের গবর (Gabrs) বা অগ্নিপূজক বলা হইয়া থাকে। গুজরাটী ভাষায় অগিয়ারি অথবা ইংরেজী Fire-Temple শব্দটিও যথার্থ অর্থবােধক নহে। পাশীগণ নিজেরা ভারতে এবং ইরানে এইস্থলে দ-গাহ (Dad| Gah) অদর (Adaran) এবং আতশ-বহরাম (AtashBehram) ইত্যাদি শব্দ ( গির্জা প্রভৃতি শব্দের সমার্থক ) ব্যবহার করিয়া থাকেন। আতর গৃহ বুঝাইতে মিথ | দর-ই-মেহর শব্দটিও ব্যবহৃত হয়। পাশী সমাজে অগ্নির প্রতি শ্রদ্ধাসূচক কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষিত হয়-অদরগৃহে সাধারণের দৃষ্টির অন্তরালে আতর দিবারাত্রি জ্বলিতে | থাকে, গোড়া পার্শীগণ সেখানে কখনই কিছু অপবিত্র করিবেন না, তাহারা ফু দিয়া আগুন নিবাইবেন না, ধূমপান করিবেন না, পুরােহিত অগ্নির সম্মুখে প্রার্থনাবাণী উচ্চারণের সময় বস্ত্রখণ্ডদ্বারা মুখ আবৃত করিবেন ; ইহা ভিন্ন অগ্নি দ্বার। শবদাহ প্রথা যে জরথুস্ত্র মতাবলম্বী পাশী সম্প্রদায়ের নিকট নিষিদ্ধ, ইতিহাস তাহার সাক্ষ্য দিতেছে। যে অগ্নিদেব পূজার বাহক কিন্তু প্রাপক নহেন, | তাহার প্রতি এই শ্রদ্ধা ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্যেরই অনুসারী। তাই ভারতের রাজন্যবর্গ সহজেই পার্শী সম্প্রদায়ের পৃষ্ঠপােষক হইয়াছিলেন। সৌরাষ্ট্রের মৈত্রিকগণ এবং পাঞ্জাবের অগ্নিহােত্রী সম্প্রদায়ও অগ্নিকে অনুরূপ শ্রদ্ধা করিয়া থাকেন। ভারতবর্ষের শকযুগের এবং ইরান দেশের প্রাচীন মুদ্রায় অগ্নিবেদীর চিত্র দেখা যায়। শক নৃপতিগণের পুরােহিতবর্গ ক্রমে ব্ৰহ্মক্ষত্রিয়রূপে এদেশের সমাজে মিশিয়া গেলেন। দাক্ষিণাত্যে ইহাদের বংশ হইতেই বঙ্গদেশের সেন রাজবংশের উদ্ভব হইয়াছিল। সম্রাট আকবর নওসারীর ( Navasari) দর মেহেরজী রানার (Dastur Meherjirana) নিকট হইতে অগ্নিপূজার তত্ত্বচর্চা করেন—এমন কি তাহার গৃহেও সেই পবিত্র অগ্নির স্থাপনা করেন।

আদেশীর দীনশা অগ্নিমিত্র শুঙ্গ বংশ দ্র অগ্নিহােত্র আহিগ্নি ব্রাহ্মণের নিত্যকর্তব্য যজ্ঞবিশেষ। বেদাধ্যয়নের পর গুরুগৃহ হইতে গৃহে প্রত্যাবর্তন করিয়া ব্রহ্মচারী বিবাহ করিয়া গৃহস্থ বা গৃহপতি হইতেন। প্রত্যেক গৃহপতির বাড়িতেই একটি পৃথক অগ্নিশালা বা

১২