পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
অন্ধ্র প্রদেশ
অন্ধ্র প্রদেশ

ঔরঙ্গজেবের রাজত্বকালে গােলকোণ্ডার কুতুবশাহী রাজ্য মােগল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।

১৭১৩ খ্রীষ্টাব্দে মােগল সম্রাট ফররুখশিয়র নিজামউলমুলক’ উপাধি দিয়া আসফ জাহ, নামক এক ব্যক্তিকে দাক্ষিণাত্যের সুবাদার নিযুক্ত করেন। ১৭২৪ খ্রীষ্টাব্দ হইতে আসফ জাহ, প্রায় স্বাধীনভাবে দক্ষিণ ভারতের মােগল রাজ্যাংশ শাসন করিতে থাকেন। তাঁহার বংশধরগণ সাধারণতঃ নিজাম নামে পরিচিত। হায়দরাবাদ নগরে ইহাদের রাজধানী ছিল। ১৭৫৩ খ্রীষ্টাব্দে নিজাম সলাবং জঙ্গ ফরাসী ঈস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির নিকট সামরিক সাহায্য লাভের জন্য উত্তর সরকার অর্থাৎ কোণ্ডাপল্লি, এলুরু, রাজমহেন্দ্রী ও শ্রীকাকুলম নামক চারিটি জনপদের কর্তৃত্ব উক্ত কোম্পানির হস্তে অর্পণ করেন। এই অঞ্চল বঙ্গোপসাগরের তীরে কৃষ্ণ নদী হইতে চিল্কা হ্রদ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এবং ইহার বার্ষিক আয় ছিল প্রায় সওয়া পাঁচ কোটি টাকা।

এই সময়ে দক্ষিণ ভারতে ফরাসীদিগের স্থলে ক্রমশঃ ইংরেজ ঈস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির প্রভাব বর্ধিত হইতে থাকে। ফলে ১৭৬৬ খ্রীষ্টাব্দে ইংরেজগণ নিজামের নিকট হইতে উত্তর সরকার লাভ করে। শীঘ্রই গুন্টর অঞ্চলেও ব্রিটিশ অধিকার বিস্তৃত হয়। এই সকল জনপদ ইংরেজ শাসিত মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির সহিত সংযুক্ত হইয়াছিল।

১৯৪৭ খ্রীষ্টাব্দে ভারতবর্ষ স্বাধীন হইবার সময় তেলিঙ্গানা হায়দরাবাদের নিজামরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং বর্তমান রাজ্যের অপরাংশ ছিল ব্রিটিশ-ভারতের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির অংশ। ১৯৫৩ খ্রীষ্টাব্দের ১ অক্টোবর মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত তেলুগুভাষী জেলাগুলি লইয়া একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ গঠিত হইল। কল ঐ প্রদেশের প্রধান নগর হইল।

ইতিমধ্যে হায়দরাবাদের নিজাম রাজ্যে ভারতসরকারের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। কিছুকালের জন্য মহামান্য নিজাম বাহাদুর প্রাদেশিক শাসনকর্তারূপে ঐ জনপদ শাসন করেন। অতঃপর নিজাম রাজ্যের মারাঠী, কন্নড এবং তেলুগু ভাষাভাষী অঞ্চলৰয় বিভিন্ন প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত করিয়া ঐ রাজ্যের অস্তিত্বলােপের ব্যবস্থা হয়। ১৯৫৬ খ্রীষ্টাব্দের ১ নভেম্বর নিজামের শাসনধীন তেলিঙ্গানা জনপদ নবগঠিত প্রদেশের সহিত সংযুক্ত হইয়া বৃহত্তর ‘অন্ধ্র প্রদেশ’ গঠিত হইল। তখন প্রাদেশিক রাজধানী কল হইতে হায়দরাবাদে স্থানান্তরিত হয়।

বঙ্গোপসাগরের পূর্বদিগবর্তী দেশসমূহে ভারতীয় সংস্কৃতির বিস্তারে প্রাচীন কলিঙ্গবাসীর দান উল্লেখযােগ্য।

উড়িষ্যা এবং অন্ধ্র প্রদেশের সমুদ্রতীরস্থিত অঞ্চলের অধিবাসীরাই ঐ কলিঙ্গ জাতির বংশধর। অন্ধ্র প্রদেশ প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যের ইতিহাসে একটি বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী। প্রাকৃত সত্তসঈ বা গাথাসপ্তশতী শাতবাহনরাজ হালের রচিত বলিয়া প্রসিদ্ধি আছে। কিংবদন্তী অনুসারে গুণাঢ্যের প্রাকৃত বৃহকথা এবং সর্ববর্মা রচিত সংস্কৃত কাতন্ত্র বা কলাপ ব্যাকরণ শাতবাহন রাজসভায় লিখিত হইয়াছিল। কাব্যদর্শ ও দশকুমারচরিত রচয়িতা সুপ্রসিদ্ধ দণ্ডী অন্ধ্রদেশীয় ছিলেন বলিয়া কেহ কেহ মনে করেন।

নম্নিচোড়কৃত কুমারসম্ভবমু এবং নগ্নয় রচিত আন্ধ্র মহা| ভারতমু প্রাচীন তেলুগু সাহিত্যের গৌরব। দ্বিতীয় গ্রন্থখানি পূর্বচালুক্য বংশীয় প্রথম রাজরাজের রাজত্বকালে (১০১৯-১০৬১ খ্রী) রচিত হইয়াছিল।

পূর্বভারতের পালবংশীয় রাজগণের তাম্রশাসনে হীন জাতি হিসাবে অন্ধ্রদিগের উল্লেখ আছে। সম্ভবতঃ অন্ধ| দেশীয় অস্ত্যজ জাতিসমূহের লােকেরা জীবিকার্জনের জন্য পালরাজ্যে আসিয়া বিভিন্ন নিম্নবৃত্তি অবলম্বন করিত।

M. Rama Rao, Andhra through the Ages, Guntur, 1957 ; R. C. Majumdar, ed., The History and Culture of the Indian People, vol. IV, Bombay, 1955 ; Ministry of Information and Broadcasting, Government of India, India 1963, Delhi, 1963 ; Dinesh Chandra Sirkar, The Successors of the Satavahanas in the Lower Deccan, Calcutta, 1934.

দীনেশচন্দ্র সরকার
অন্ধপ্রদেশ ভারতের অন্যতম রাজ্য ; আয়তন ২৭২০৯২ বর্গ কিলােমিটার (১০ ৬২৮৬ বর্গমাইল)। দাক্ষিণাত্য উপত্যকার প্রায় এক-চতুর্থাংশ ব্যাপিয়া বিস্তৃত এই রাজ্যের দক্ষিণে মাদ্রাজ, পশ্চিমে মহীশূর, উত্তরপশ্চিমে মহারাষ্ট্র, উত্তরে মধ্যপ্রদেশ ও উড়িষ্যা এবং পূর্বে বঙ্গোপসাগর ; সমুদ্রোপকূলের দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৫০ কিলােমিটার ( প্রায় ৬০০ মাইল)। রাজ্যটির মানচিত্রের আকৃতি সম্পর্কে খর্বগ্রীব ও স্ফীতোদর, এই বর্ণনা অনেকটা যথাযথ। রাজ্যের পূর্ব ও উত্তর সীমান্ত বরাবর পূর্বঘাট পর্বতমালা বিস্তৃত। বিভিন্ন নদীর নকশা-কাটা অনুচ্চ পর্বতরাজি, উর্বর নদী-উপত্যকা এবং সমতল উপকূল-অঞ্চল- এক কথায় ইহাই অন্ধ্র প্রদেশের ভূ-সংস্থান। সমগ্র রাজ্য ব্যাপিয়া পর্বত ও অধিত্যকাভূমি ইতস্ততঃ বিস্তৃত। রাজ্যের প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী
৬৩