কিন্তু কোনোমতেই সেই অন্তর দিয়ে বুঝি নে যেখানে বিচ্ছেদের বিষ ছড়িয়ে আছে। বেহারের লোক, মাদ্রাজের লোক, মাড়োয়ারের লোককে আমরা পর বলেই জানি, তার প্রধান কারণ, যে আচারের দ্বারা আমাদের চিত্ত বিভক্ত সে আচার কেবল যে স্বীকার করে না বুদ্ধিকে তা নয়, বুদ্ধির বিরুদ্ধে যায়। আমাদের ভেদের রেখা রক্তের লেখা দিয়ে লিখিত। মূঢ়তার গণ্ডির মতো দুর্লঙ্ঘ্য ব্যবধান আর কিছুই নেই।
আমাদের দেশের হরিজন-সমস্যা এবং হিন্দু-মুসলমানসমস্যার মূলে যে মনোবিকার আছে তার মতো বর্বরতা পৃথিবীতে আর কী আছে জানি না। আমরা পরস্পরকে বিশ্বাস করতে পারি না, অথচ সে কথা স্বীকার না করে নিজেদের বঞ্চনা করতে যাই। মনে করি ইংলণ্ড্ স্বাধীন হয়েছে পার্লামেণ্টের রীতি মেনে, আমরাও সেই পথ অনুসরণ করব। ভুলে যাই যে, সে দেশে পার্লামেণ্ট্ বাইরে থেকে আমদানি করা জিনিস নয়, অনুকূল অবস্থায় ভিতর থেকে সৃষ্ট হয়ে ওঠা জিনিস। এককালে ইংলণ্ডে প্রটেস্টাণ্ট্ এবং রোমান ক্যাথলিকদের মধ্যে প্রবল বিরোধ ছিল, কিন্তু বৈজ্ঞানিক বুদ্ধি ও বিদ্যার প্রভাবে তা ক্ষীণ হয়ে দূর হয়েছে। ধর্মের তফাত সেখানে মানুষকে তফাত করে নি।
মনুষ্যত্বের বিচ্ছিন্নতাই প্রধান সমস্যা। সেইজন্যই আমাদের মধ্যে কালে কালে যে-সব সাধক চিন্তাশীল ব্যক্তিদের আবির্ভাব হয়েছে তাঁরা অনুভব করেছেন— মিলনের পন্থাই ভারতপন্থা।