ঝাঁক্ মাটিতে খুঁটিয়া খুঁটিয়া খাইতেছে, তাহার মধ্যে শত শত নিদ্রালু নির্ব্বোধ গাভী শয়ান—লোকজনের গোলমালে তাহাদের ভ্রক্ষেপ মাত্র নাই। কতকগুলি বালক বাঁশের লম্বা কচি-কচি ডাল লইয়া দণ্ডায়মান—ভক্তেরা সেই সকল ডাল ক্রয় করিয়া গাভীদের পদতলে উপহার দিতেছে; গাভীরা ঋণস্বরূপ উহা গ্রহণ করিয়া প্রশান্তভাবে চর্ব্বণ করিতেছে। বৃক্ষশাখা হইতে শেওলাপড়া মাটির ভাঁড়সকল ঝুলিতেছে, তাহার উপর ঝাঁকে-ঝাঁকে টিয়া পাখি আসিয়া বসিতেছে—তাহাদের গোল-গোল সুন্দর মাথার চারিধারে লোহিত রেখার ঘের। ... ... হঠাৎ ঘোড়ার পদক্ষেপশব্দ;—এই গর্ব্বিত অশ্বারোহীবৃন্দ না জানি কারা! অশ্বদিগের মসৃণ গাত্র চিক্চিক্ করিতেছে—সুন্দর অশ্বারোহীদিগের অস্ত্র সকল চক্চক্ করিতেছে। ইনি রাজার ভ্রাতা—ইঁহার পশ্চাতে রাজপুত ঠাকুরেরা, পুরোভাগে আসা-সোটাধারী পদাতিকেরা দৌড়িতেছে। ইঁহার মাথায় মখ্মলের পাগড়ি—গায়ে সবুজরঙের ফুলকাটা চাপকান, নিজ অশ্বকে সম্পূর্ণ আয়ত্ত করিয়া নাচাইয়া নাচাইয়া চালাইতেছেন। ক্ষণকালের জন্য ইহাকে দেখিতে পাইয়াছিলাম। ইঁহার উদার সাহসিক মুখশ্রীতে উচ্চকুল, পুরাতন শোণিত, চিরাভ্যস্ত প্রভুত্বের ভাব যেন স্পষ্ট অনুভব করা যায়। ইনি একজন প্রকৃত ক্ষত্রিয়, ভারতবর্ষের আদিম বিজয়ীগণের সাক্ষাৎ বংশধর।
হস্তিবৃন্দ হস্তিশালায় প্রবেশ করিল। ঐ দেখ, সাতটা হস্তী— কৃষ্ণবর্ণ প্রকাণ্ড স্তুপাকৃতি, গম্ভীর “ফিলজফর”, ধীরগতি, স্বকীয় দেহনিম্নস্থ কোলাহলময় তাবৎ জীবপ্রবাহের উপর কৃপাদৃষ্টি করিতেছে। শুণ্ডদ্বারা মৃত্তিকা ঈষৎ ছুঁইয়া, প্রকাণ্ড মস্তকের উপর মাহুতকে ধারণ করিয়া ইহারা একে একে দ্বারমধ্যে অন্তৰ্হিত হইল। মানুষের ন্যায় পা নোয়াইয়া, কোমল পদতল ধীরে ধীরে বাহির করিয়া,