পুরুষানুক্রমে ক্রমাগত বর্দ্ধিত হইয়া আর্য্য-মস্তিকের গঠন-পরিবর্ত্তন করিয়া হিন্দুদর্শন ও হিন্দুকাব্যের আকারে পরিণত হইয়াছে। এইরূপ উপলব্ধি হয় যে, বিশেষ বিশেষ নশ্বর সত্তার পশ্চাতে একটা মহাশক্তি বিদ্যমান, যে শক্তি সর্ব্বপ্রকার পদার্থ ও সত্তা উৎপাদন করে, যাহা অবিনশ্বর, যাহা অনন্তকাল বর্ত্তমান, সহস্ৰ সহস্ৰ জন্মমৃত্যুর মধ্যে যাহার প্রকাশ এবং যাহার কদাচ ক্ষয় হয় না। এই শক্তিকেই হিন্দুরা পূজা করে—এই শক্তিপূজাই তাহাদের ধর্ম্মের ভিত্তিভূমি। এই কথাটা যদি একবার উপলব্ধি করা যায়, তাহ হইলে সর্ব্বপ্রকার অসঙ্গতির ব্যাখ্যা আপনা আপনি হইয়া যায়। হিন্দুধর্ম্মের মধ্যে অসভ্যজাতিসুলভ পৌত্তলিকতার সহিত অতিসূক্ষ্ম তত্ত্বচিন্তার সম্মিলন হইয়াছে। এই হিন্দুরা তেত্রিশকোটি দেবতা মানে, তা ছাড়া পঞ্চভূত, পশুপক্ষী বৃক্ষ তারকা প্রস্তর সকলকেই পূজা করে। জগদ্ব্রহ্মবাদ—একেশ্বরবাদ—বহুদেববাদ সমস্তই ইহার মধ্যে একাধারে বর্ত্তমান। বিশ্বের সার্ব্বভৌমিক সত্তাকে কিম্বা তাহার বাহ্য প্রকাশকে এক করিয়া দেখ, কি বহু করিয়া দেখ, জড়ভাবে দেখ, কি আত্মাভাবে দেখ—যে ভাবে দেখো, তাহারই উপর এই বিশেষ মতবাদ নির্ভর করে। একবার ইহা বুঝিতে পারিলে তাহাদের বাতুল কল্পনার অর্থ পাওয়া যায়, তাহাদের কাব্যগত অদ্ভুত স্বপ্নকাহিনীর ব্যাখ্যা হয়। হিন্দুরা প্রকৃতির মধ্যে মগ্ন হইয়া গিয়া, হস্তী বানর ভল্লুক কীট পতঙ্গ উদ্ভিজ্জ সকলকেই আপনাদের সমকক্ষ সঙ্গী করিয়া লইয়াছে। অধিকন্তু, তাহারা একটা মহাপ্রাণ উপলব্ধি করিয়াছে, যে প্রাণ তরল তরঙ্গময়, যাহা মরিতেছে, জন্মিতেছে, বৃদ্ধি পাইতেছে এবং যে প্রাণ বিচিত্র ও চিরপরিবর্ত্তনশীল। কিন্তু যখন আমি এই লোকারণ্যের মধ্যে এই সকল মন্দিরের মধ্যে, মুসলমান মস্জিদের দুইটি সমুন্নত
পাতা:ভারতবর্ষে.djvu/৬৯
অবয়ব
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪
ভারতবর্ষে।