পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতার আদর্শ।
৭১

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতার আদর্শ।

 ফরাসী মনীষী গিজো য়ুরোপীয় সভ্যতার প্রকৃতি-সম্বন্ধে যাহা বলিয়াছেন, তাহা আমাদের আলোচনার যোগ্য। প্রথমে তাঁহার মত নিম্নে উদ্ধৃত করি।

 তিনি বলেন, আধুনিক যুরোপীয় সভ্যতার পূর্ব্ববর্ত্তী কালে, কি এসিয়ায় কি অন্যত্র, এমন কি, প্রাচীন গ্রীস্‌রোমেও, সভ্যতার মধ্যে একটি একমুখীভাব দেখিতে পাওয়া যায়। প্রত্যেক সভ্যতা যেন একটি মূল হইতে উঠিয়াছে এবং একটি ভাবকে আশ্রয় করিয়া অধিষ্ঠিত রহিয়াছে। সমাজের মধ্যে তাহার প্রত্যেক অনুষ্ঠানে, তাহার আচারে বিচারে, তাহার অবয়ববিকাশে, সেই একটি স্থায়ী ভাবেরই কর্ত্তৃত্ব দেখা যায়।

 যেমন, ইজিপ্টে এক পুরোহিতশাসনতন্ত্রে সমস্ত সমাজকে অধিকার করিয়া বসিয়াছিল; তাহার আচার-ব্যবহারে, তাহার কীর্ত্তিস্তম্ভগুলিতে, ইহারই একমাত্র প্রভাব। ভারতবর্ষেও ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রেই সমস্ত সমাজকে একভাবে গঠিত করিয়া তুলিয়াছিল।

 সময়ে সময়ে ইহাদের মধ্যে ভিন্ন শক্তির বিরোধ উপস্থিত হয় নাই, তাহা বলা যায় না; কিন্তু তাহারা সেই কর্ত্তৃভাবের দ্বারা পরাস্ত হইয়াছে।

 এইরূপ একভাবের কর্ত্তৃত্বে ভিন্ন দেশ ভিন্নরূপ ফললাভ করিয়াছে। সমগ্র সমাজের মধ্যে এই ভাবের ঐক্যবশত গ্রীস অতি আশ্চর্য্য দ্রুতবেগে এক অপূর্ব্ব উন্নতি লাভ করিয়াছিল। আর কোন জাতিই এত অল্পকালের মধ্যে এমন উজ্জ্বলতা লাভ করিতে পারে নাই। কিন্তু গ্রীস তাহার উন্নতির চরমে উঠিতে না উঠিতেই যেন জীর্ণ হইয়া পড়িল। তাহার অবনতিও বড় আকস্মিক। যে মূলভাবে গ্রীক্‌