পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/৪২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৭শ বর্ষ, একাদশ সংখ্যা বল্পে সে কথা ত আমাদের মাষ্টীর মশায় বলে দেয় নি। ক্লাসে পড়া মুখস্থ করে তার একটা ধারণ হয়ে গেছে যে কবিতা থেকে নিজের মন দিয়ে বোঝবার কিছুই নেই। মাষ্টার মশায় তাকে ব্যাকরণ অভিধান সমস্ত বুঝিয়েছে, কেবল এই কথাটি বোঝায় নি যে রসকে নিজের হৃদয় দিয়েই বুঝতে হয় মাষ্টারের বোঝা দিয়ে বুঝতে হয় না । সে মনে করেছে বুঝতে পারার মানে একটা কথার জায়গায় আর একটা কথা বসানে, “সুশীতল” শব্দের জায়গায় "সুস্নিগ্ধ” শব্দ প্রয়োগ করা। এ পর্য্যন্ত মাষ্টার তাকে ভরসা দেয় নি, তার মনের স্বাধীনতা সম্পূর্ণ অপহরণ করেছে, যেখানে বোঝা তার পক্ষে নিতান্ত সহজ সেখা েও নবুঝতে পারে বলে তার ধারণাই হয়নি; এই জন্তে ভয়ে ভয়ে সে আপনার স্বাভাবিক শক্তিকে থাটায় না—সেও বলে আমি বুঝিনে, আমরাও বলি সে বোঝে না । এলাহাবাদ সহরে যেখানে গঙ্গা যমুনা দুই নদী একত্র মিলিত হয়েছে সেখানে ভূগোলের ক্লাসে যখন একটি ছেলেকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল নদী জিনিষটা কি তুমি কখনো দেখেছ ? সে বল্পে, না । ভূগোলের নদী জিনিষটার ংজ্ঞা সে অনেক মার খেয়ে শিখেছে, এ কথা মনে করতে তার সাহসই হয়নি যে, যে নদী দুষ্ট বেলা সে চক্ষে দেখেছে, যার মধ্যে সে আনন্দে স্বান করেছে, সেই নদীই তার ভূগোল বিবরণের নদী, তার বহু দুঃখের এগজামিন পাসের নদী। তেমনি করেই আমাদের ক্ষুদ্র পাঠশালার মাষ্টর মশায়রা কোনে-মতেই এ কথা আমাদের জানতে দেয় না যে অনস্তকে একান্ত ভাবে আপনার মধ্যে এবং সমস্তের মধ্যে ছোট ও বড় - כי9אל כי প্রত্যক্ষ উপলব্ধি করা যায়। এই জন্ত অনন্ত স্বরূপ যেখানে আমাদের ঘর ভরে পৃথিবী জুড়ে আপনি দেখা দিলেন সেখানে আমরা বলে বসলুম, বুঝতে পারিনি, দেখতে পেলুম না। ওরে বোঝবার আছে কি ? এই যে এষঃ, এই যে এই। এই যে চোখ জুড়িয়ে গেল, প্রাণ ভরে গেল, এই যে বর্ণে গন্ধে গীতে নিরন্তর আমাদের ইন্দ্রিয়-বীণায় তার হাত পড়চে, এই যে স্নেহে প্রেমে সখ্যে আমাদের হৃদয়ে কত রং ধরে উঠেছে, কত মধু ভরে উঠচে ; এই যে দুঃখ রূপ ধরে অন্ধকারের পথ দিয়ে কল্যাণ আমাদের জীবনের সিংহ দ্বারে এসে আঘাত করচেন, আমাদের সমস্ত প্রাণ কেঁপে উঠুচে, বেদনায় পাষাণ বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে ; আর ঐ যে র্তার বহু অশ্বের রথ, মানুষের ইতিহাসের রথ, কত অন্ধকার ময় নিস্তব্ধ রাত্রি এবং কত কোলাহলময় দিনের ভিতর দিয়ে বন্ধুর-পন্থায় যাত্রা করেছে, র্তার বিদ্যুৎ শিখাময়ী কষা মাঝে মাঝে আকাশে ঝলকে ঝলকে উঠচে—এই ত এষঃ, এই ত এই। সেই এইকে সমস্ত জীবন মন দিয়ে আপন করে জানি, প্রত্যহ প্রতিদিনের ঘটনার মধ্যে স্বীকার করি এবং উৎসবের দিনে বিশ্বের বাণীকে নিজের কণ্ঠে নিয়ে তাকে ঘোষণা করি—সেই সত্যং জ্ঞানং অনন্তং ব্রহ্ম, সেই শান্তং শিবমদ্বৈতং, সেই কবিৰ্মনীষী পরিভূঃ স্বয়স্তৃঃ, সেই যে এক অনেকের প্রয়োজন গভীর ভাবে পূর্ণ করচেন, সেই যে অন্তহীন, জগতের আদি অস্তে পরিব্যাপ্ত, সেই যে মহাত্মা সদা জনানাং হৃদয়ে সন্নিবিষ্টঃ, র্যার সঙ্গে শুভযোগে আমাদের বুদ্ধি শুভবুদ্ধি হয়ে ওঠে।