889रे বলতে পিতা ও মাতা উভয়কেই একত্রে বুঝিয়েছে। মাতা পুত্রকে একান্ত করে দেখেন—তার পুত্র তার কাছে আর সমস্তকে অতিক্রম করে থাকে,। এই জন্তে তাকে দেখা শোনা তাকে খাওয়ানো পরানো সাজানো নাচানো তাকে সুখী করানোতেই মা মুখ্যভাবে নিযুক্ত থাকেন। গর্ভে সে যেমন তার নিজের মধ্যে একমাত্ররূপে পরিবেষ্টিত হয়ে ছিল, বাইরেও তিনি যেন তার জন্তে একটি বৃহত্তর গর্ভবাস তৈরি করে তুলে পুত্রের পুষ্টি ও তুষ্টির জন্তে সৰ্ব্বপ্রকার আয়োজন করে থাকেন । মাতার এই একান্ত স্নেহে পুত্র স্বতন্ত্রভাবে নিজের একটি বিশেষ মূল্য যেন অনুভব করে । কিন্তু পিতা পুত্রকে কেবলমাত্র তার ঘরের ছেলে করে তাকে একটি সঙ্কীর্ণ পরিধির কেন্দ্রস্থলে একমাত্র করে গড়ে তোলেন না । তাকে তিনি সকলের সামগ্ৰী, তাকে সমাজের মহিষ করে তোলবার জন্থেই চেষ্টা করেন । এই জন্তে তাকে সুখী করে তিনি স্থির থাকেন না, তাকে দুঃখ দিতে হয়। সে যদি এক মাত্র হত নিজেতেই নিজে সম্পূর্ণ হত তাহলে সে যা চায় তাই তাকে দিলে ক্ষতি হত না ; কিন্তু তাকে সকলের সঙ্গে মিলনের যোগ্য করতে হলে তাকে তার অনেক কামনার সামগ্রী থেকে বঞ্চিত করতে হয়-তাকে অনেক কাদাতে হয় । ছোট হয়ে না থেকে বড় হয়ে ওঠবার যে দুঃখ তা তাকে না দিলে চলে না। বড় হয়ে সকলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তবেই সে যে সত্য হবে, তার সমস্ত শরীর ও মন, জ্ঞান, ভাব ও শক্তি সমগ্রভাবে সার্থক হবে এবং সেই সার্থকতাতেই সে যথার্থ মুক্তি ভারতী । আশ্বিন, ১৩১৭ লাভ করবে—এই কথা বুঝে কঠোর শিক্ষার ভিতর দিয়ে পুত্রকে মানুষ করে তোলাই পিতার কৰ্ত্তব্য হয়ে ওঠে। ঈশ্বরের মধ্যে এই মাতা পিতা এক হয়ে আছে । তাই দেখতে পাই আমি সুখী হ’ব বলে জগতে আয়োজনের অন্ত নেই। আকাশের নীলিমা এবং পৃথিবীর শুামলতায় আমাদের চোখ জুড়িয়ে যায়—যদি নাও যেত তবু এই জগতে আমাদের বাস অসম্ভব হত না। ফলে শস্তে আমাদের রসনার তৃপ্তি হয়—যদি নাও হত তবু প্রাণের দায়ে অামাদের পেট ভরাতেই হত । জীবনধারণে কেবল যে আমাদের বা প্রকৃতির প্রয়োজন তা নয়, তাতে আমাদের আনন্দ ; শরীর চালনা করতে আমাদের আনন্দ, চিন্তা করতে আমাদের আমাদের আনন্দ, কাজ করতে আমাদের আনন্দ, প্রকাশ করতে আমাদের আনন্দ । অামাদের সমস্ত প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে সৌন্দর্য্য এবং রসের যোগ আছে। তাই দেখতে পাই বিশ্বচেষ্টার বিচিত্রব্যাপারের মধ্যে এ চেষ্টাও নিয়ত রয়েছে, যে, জগৎ চলবে, জীবন চলবে এবং সেই সঙ্গে আমি পদে পদে খুসি হতে থাকব । - মত্রক্ষলোকের যে সমস্ত প্রয়োজন তা যতই প্রকাগু প্রভূত ও আমার জীবনের পক্ষে যতই জদুরবর্তী হোক না কেন, তবুও নিশীথের আকাশে আমার কাছে মনোহর হয়ে ওঠাও তার একটা কাজ । সেই জন্ত অতবড় অচিন্তনীয় বিরাটু কাণ্ড ও প্রয়োজনবিহীন গৃহসজ্জার মত হয়ে উঠে- আমাদের ক্ষুদ্র সীমাবদ্ধ আঁকাশমণ্ডপটিকে চুমকির কাজে খচিত করে তুলেছে। .
পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/৫১৫
অবয়ব