পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩২১.djvu/৪৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

843 কিছুদিন হইতে থিয়েটারে যাইতে হইতেছিল। নাটকখানা ম্যানেজারের ভারি পছন্দ হইয়াছে। অভিনেতা অভিনেত্রীরাও বেণু দক্ষতার সহিত রিহাস লি দিতেছে। কয় দিনেই রমানাথের সেখানে বেশ একটু খাতির জময় গিয়াছিল। ম্যানেজার প্রায়ই র্তাহাকে থিয়েটার দেখিয়া যাইতে অনুরোধ করেন। ইচ্ছা থাকিলেও রমানাথ সে কথা রাখিতে সাহস করে না । সিায় ইলা একা। তাহার জরটাও স্প হইতে আবার বাড়ের মুখে চলিয়;ছল। সন্ধ্যার পর হইতেই সে কেমন আচ্ছন্ন-মত থাকে। মনে হয়, তাহার “জ্যোতিঃহারা” নাটকের অভিনয়ের ঈপ্সিতঁ রাত্রির মধ্যকার এই দিন কয়টাকে হাত দিয়া ঠেলিয়া যদি সরাইয়া ফেলা যাইভ ! স্বামী-স্ত্রীতে অনেক সময় "এই কথারই আলোচনা হয়। টাকাটা হাতে পাইলেই এখানকার দেনাপত্র মিটাইয়া দিয়া সেই দিনই তাহার কাশী যাইবে । ইলা কহিল, "মধুপুরের বাংলার ভাড় বড় বেশী। তা ছাড়া সেখানে কিই বা দেখবার শোল্বার আছে ? তার চেয়ে কাশী ভাল। বাড়ীও সস্তা, ঠাকুর-দেবতাও আছেন। আর যদি মডেই হয়, কাশীতে মলে বিশ্বেশ্বরের পাদপদ্মে স্থান পাব r; তারকব্ৰহ্ম-নামে শিব স্বয়ং যেখানে মুক্তিদাত্ম—সেস্থান ছেড়ে পাহাড়ে -অগঙ্গা দেশে না যাওয়াই ভাল।” রমানাথ তাহার মুখে হাত চাপ দিয়া কথা থামাইয়া দুই সজল ভংগন-পূর্ণ দৃষ্টিতে চাহিল, কহিল, “ইল, ফের ঐ সব কথা কইচ ! তুমি জান, তুমি না বাচলে আমিও বঁচিব না। বঁচি তে 'ভারতী রমানাথেৰ । ভাত্র ১৩২১ পারব না।” গভীর মুখে ইলার ক্ষুদ্র হৃদয় খানি কুলে-কুলে ভরিয়া উপছিয়া পড়িতে চাহিতেছিল। কৃতজ্ঞতাপূর্ণ সজল চোখের স েপ্রম দৃষ্টি স্বামীর মুখে নিবদ্ধ করিয়া সে কহিল, “তোমায় ছেড়ে স্বর্গে যেতেও আমার ইচ্ছা করে, না । মনে হয় আমি না থাকলে তোমার কত কষ্ট হবে, তবু তোমার কোন উপকারে কোন সেবাতেই লাগলুম না! আমার জন্তই তোমাব যত কষ্ট—“বাধা দিয়া রমানাথ তাঁহাকে আদর করিয়া ভুলাইয়া অন্ত কথা পাড়িল । কাশীতে ইলার এক মাসিম আছেন। তিনি বিধবা কাশী-বাসিনী। বিবাহের পূৰ্ব্বে ইল একবার মায়ের সহিত র্তাহার কাছে গিয়াছিল—তাই কাশীর বিষয়ে তাহার অনেকখানি অভিজ্ঞতা সঞ্চিত ছিল। ইলা কহিল, “মাসিমাকে লিখে দাও, তিনি আমাদের জন্তে ছোট-খাট দেখে বাড়ী কি ঘর ভীড় করে রাখবেন। বাঙ্গালীটোল বড় ঘেঞ্জি আর 'নোংরা। অসির দিকেই ভাল। ওদিকের গঙ্গার জল যেন কাচের মত। চকৃচকে, নীল জল ! কি চমৎকার দেখতে! কত সাধু সন্ন্যাসী ব্যোম্ ব্যোম্ শব্দ করে পথে চলেন । কেমন সব গঙ্গার স্নান করে স্তব পাঠ করেন,—কত তালই লাগত ! তেমন করে আর কি চলে বেড়াতে পারব, না, গঙ্গায় নাইতে পারব—” তাহার করুণ কণ্ঠে বিষাদের ঝঙ্কার হাসির মধ্যে অশ্রু ফুটিয়া উঠিল । রমানাথ তাহার. .তৈলীন রুক্ষ চুলগুলায় সম্বেহুভাবে অঙ্গুলি সঞ্চালন করিতে করিতে • কছিল, “পারবে বই কি,-নিশ্চয়