পাতা:ভারত-প্রতিভা (প্রথম খণ্ড) - সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়.pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামী বিবেকানন্দ । ४४७ সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলে।” গিরিশবাবু উত্তরে বলিলেন, “ও সকল বুঝিবার বুদ্ধি ও অবকাশ দুই-ই আমার নাই। ভগবান রামকৃষ্ণের রূপায় ভাবসমূদ্র পার হয়ে চলে যাব। তুমি লোকশিক্ষা দিবে, তাই তিনি তোমার ও সব পড়িয়েছেন।” তার পর গিরিশবাবু আবার বলিলেন, “আচ্ছা নরেন, বেদ-বেদান্ত তো ঢের পড়েছ ; কিন্তু অন্নাভাবে ক্ষুধিতের চীৎকার, দরিদ্রের অসহনীয় দুঃখ, লম্পটের হন্তে সতীর লাঞ্ছনা প্রভৃতি নানাপ্রকার ভীষণ ব্যাপার ঘটছে, বেদ-বেদান্তের মধ্যে কি এর কোন প্ৰতিকার পের্ক্সেছ ?” স্বামীজী অশ্রুসিক্ত লোচনে, ভাবাবেগ-পূর্ণ-হৃদয়ে তৎক্ষণাৎ সে স্থান ত্যাগ কৱিলেন ; কিয়ৎক্ষণ পরে ফিরিয়া আসিয়া স্বামী সদানন্দকে রুগ্ন, আতুর ও আর্জের সেবার জন্য একটি সেবাশ্রম প্রতিষ্ঠা করিবার উপদেশ দিলেন । এই দিন স্বামীজী বলিয়াছিলেন, “জগতে এক জনের দুঃখ-কষ্ট দূর করুবার জন্যও আমি হাজারবার জন্মগ্রহণ করিতে রাজি আছি, নিজের মুক্তি তুচ্ছ, উহা চাই না। প্রত্যেকে যাতে মুক্ত হইতে পারে, আমি সেই সাহায্য করতে চাই।” সেবাশ্রম, মঠ প্ৰভৃতি প্ৰতিষ্ঠার জন্য স্বামীজী বহু চেষ্টা করিতে লাগিলেন বটে, কিন্তু তাহার শরীরের অবস্থা ক্রমেই অবনতির পথে চলিতেছে দেখিয়া, গুরুভ্রাতা ও শিষ্যবৰ্গ শঙ্কিত হইয়া উঠিলেন। ইতিমধ্যে মিস্ মূলর ইংলণ্ড হইতে আসিয়া পৌছিলেন। এদিকে চিকিৎসকগণ স্বামীজীকে পরামর্শ দিলেন, বায়ু পরিবর্তন ও বিশ্রাম অত্যাবশ্যক। বাধ্য হইয়া কতিপয় শিষ্য ও গুরুভ্রাতাকে সঙ্গে লইয়া স্বামীজীকে আলমোড়ায় গমন করিতে হইল । হিমালয়ে নির্জন অরণ্যানীর মধ্যে আত্মগোপন করিলেও স্বামীজী বহিজগৎ হইতে সম্পূর্ণরূপে আপনাকে নির্লিপ্ত রাখিতে পারিলেন না।