পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আশ্চর্য হৃদয়গ্রাহী। বাইবেল ক্লাসের প্রতি আমার অরুচির ভাবটা কেটে গেল। পি.ই.স্কুলের বাইবেল পাঠ থেকে আৱকিউহার্টের পাঠের তফাতটা আসমান জমিনের তফাত। কলেজ-জীবন মোটের উপর নীরসভাবেই কাটতে লাগল। দর্শনসমিতি ও অন্যান্য সমিতির সভায় অবশ্য আনাগোনা করতাম। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে উত্তেজনার খোরাক জুটল অন্যদিক থেকে।

সরকার তখন সবেমাত্র ডাৱতরক্ষা বাহিনীতে একটি ইউনিভার্সিটি ইউনিট গড়ে তুলতে রাজী হয়েছেন। এক ডবল কম্প্যানি গঠনের উদ্দেশ্যে লোক নিয়োগ করা হচ্ছে। সাধারণ সৈনদলের মতো এখানে শারীরিক পরীক্ষা, বিশেষত চক্ষুপরীক্ষায় কড়াকড়ি কম হবে ভেবে আশা হল নিজের সম্বন্ধে। ভারতীয় পক্ষ থেকে এই পরীক্ষার বিরাট উদ্যোক্তা ছিলেন কলকাতার বিখ্যাত অস্ত্রচিকিৎসক ডক্টর সুরেশচন্দ্র সর্বাধিকারী। বাঙালীদের সামরিক শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর উৎসাহের সীমা পরিসীমা ছিল না। এবার আর আমার আশাভঙ্গের কারণ ঘটল না। গড়ের মাঠে মুফতি পরে আমাদের শিক্ষানবিশী শ‍ুর‍ু হল। ফোর্ট উইলিয়ম থেকে আমদানি হল লিঙ্কন‍্স রেজিমেণ্টমার্কা অফিসার ও ইন‍্স্ট্রাক্টর। প্রথম দিনের হাজিরায় যে দলটি উপস্থিত হল তার চেহারার বৈচিত্র্য দেখে তাক লাগে। কেউ বাঙালী কামদায় ধুতি পৱা, কারুর বা আধামিলিটারি ঢঙে হাফপ্যাণ্টশোভিত অঙ্গ, কারুর পরনে ট্রাউজার, কেউ খালি মাথায়, কেউ পাগড়ি-ওয়ালা, কেউ হ্যাট-পরা ইত্যাদি। দেখে মনে হত না যে এই বিচিত্র জঙ্গলের ভিতর থেকে শিক্ষিত সৈন্যদল বেরুতে পারে। কিন্তু দুমাস বাদে আমরা যথন ফোর্ট উইলিয়মের কাছে তাঁবু গাড়লাম, মিলিটারি উর্দি পরে কুচকাওয়াজ শ‍ুর‍ু করলাম, তখন সকলের ভোল বদলে

১১৪