পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমাদের এক আত্মীয় (সুহৃৎচন্দ্র মিত্র) নতুন কটকে এসেছিলেন। আমাদের বাড়ির কাছেই থাকতেন। একদিন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তাঁর ঘরে বসে বই ঘাঁটছি হঠাৎ নজরে পড়ল স্বামী বিবেকানন্দের বইগুলোর উপর। কয়েক পাতা উল্টেই বুঝতে পারলাম এই জিনিসই আমি এতদিন ধরে চাইছিলাম। বইগুলো বাড়ি নিয়ে এসে গোগ্রাসে গিলতে লাগলাম। পড়তে পড়তে আমার হৃদয়মন আচ্ছন্ন হয়ে যেতে লাগল। প্রধান শিক্ষকমশাই আমার মধ্যে সৌন্দর্যবোধ, নৈতিকবোধ জাগিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন—জীবনে এক নতুন প্রেরণা এনে দিয়েছিলেন কিন্তু এমন আদশের সন্ধান দিতে পারেননি যা আমার সমগ্র সত্তাকে প্রভাবান্বিত করতে পারে। এই আদর্শের সন্ধান দিলেন বিবেকানন্দ। দিনের পর দিন কেটে যেতে লাগল, আমি তাঁর বই নিয়ে তন্ময় হয়ে রইলাম। আমাকে সবচেয়ে বেশি উদ্ব‌ুদ্ধ করেছিল তাঁর চিঠিপত্র এবং বক্ত‌ৃতা। তাঁর লেখা থেকেই তাঁর আদর্শের মূল সরটি আমি হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছিলাম। “আত্মনঃ মোক্ষার্থম্, জগদ্ধিতয়া”— মানবজাতির সেবা এবং আত্মার মুক্তি—এই ছিল তাঁর জীবনের আদর্শ। আদর্শ হিসেবে মধ্যযুগের স্বার্থসর্বস্ব সন্ন্যাসীজীবন কিংবা আধুনিক যুগের মিল ও বেন্থামের ‘ইউটিলিটারিয়ানিজ‍্ম’ কোনোটাই সার্থক নয়। মানবজাতির সেবা বলতে বিবেকানন্দ স্বদেশের সেবাও বুঝেছিলেন। তাঁর জীবনীকার ও প্রধান শিষ্যা ভগিনী নিবেদিতা লিখে গেছেন, “মাতৃভূমিই ছিল তাঁর আরাধ্য দেবী। দেশের এমন কোনো আন্দোলন ছিল না যা তার মনে সাড়া জাগায়নি।” একটি বক্ত‌ৃতায় বিবেকানন্দ বলেছিলেন, “বল ভারতবাসী, ভারতবাসী আমার ভাই, মূর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র ভারতবাসী, চণ্ডাল ভারতবাসী আমার ভাই।” তিনি বলতেন যে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্য, একে একে

৪৩