পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/২৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাস্তা আছে। গৃহের ঠিক মধ্যস্থলে একটী সুন্দর মৰ্ম্মর শবাধার—ইহা জওয়াব কবর ব্যতীত আর কিছুই নহে, প্ৰকৃত কবর মৃত্তিক নিৰ্ম্মিত এবং নিম্নস্থ একটী কুঠরীতে বস্ত্ৰাচ্ছাদিত রূপে দেখিলাম। এই আচ্ছাদন বস্ত্রের উপর প্রতি দিনই পুষ্পবৰ্ষিত হইয়া থাকে। মৃত ব্যক্তির সমাধির উপর ঈদৃশ ভাবে পুষ্প বর্ষণ অতি সুন্দর ভাবজ্ঞাপক, ইহাদ্বারা মৃতব্যক্তির প্রতি আত্মীয় স্বজনের ভক্তি ও শ্রদ্ধার বিকাশ হয়। জগতে ফুলের অপেক্ষা সুন্দর ও ক্ষণস্থায়ী আর কি আছে ? এত শোভা ও এত ক্ষণস্থায়ীত্ব আর কার ? হায়! মানুষও কি তাই নয় ? দেখিতে দেখিতে জীবন-দীপ নিবিয়া । যায়—দেখিতে দেখিতে হৃদয়ে হাহাকার জাগিয়া ওঠে ! এখান হইতে অশ্ব-শকট যতই কুতবমিনারের দিকে অগ্রসর হইতে আরম্ভ করিল, ততই দূরে বামদিকে প্রাচীন স্থানের শত শত স্মৃতি চিহ্ন দর্শন করিতে আরম্ভ করিলাম। প্ৰাচীন দুৰ্গ, মসজিদ, প্ৰভৃতির ভগ্নাবশেষ ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত ভাবে বিরাজমান। এক সময়ে যে দুর্গ দৃঢ়তার সহিত শত্রুর আক্রমণ উপেক্ষা করিত এখন তাহা বিলুপ্তপ্রায়। দুর্গের ভিত্তি যে এক সময়ে বিশেষ দৃঢ় ছিল তাহা সহজেই অনুমান করা যায়। মসজিদটী একটা উচ্চভূমির উপরে স্থাপিত। ইহা আকৃতিতে সমচতুষ্কোণ, দ্বিতল এবং প্রতি কোণে কোণে এক একটা ৫০ ফুট উচ্চ স্তম্ভ বিদ্যমান। মসজিদের উপরিভাগে ৮-টা নানা কারুকাৰ্য্যখচিত অলঙ্কত সুদৃঢ় গম্বুজ। এই বৃহৎ মসজিদের নিম্নতলে ১০৪টি কুঠারী আছে—প্ৰত্যেকটী প্রকোষ্ঠ ৯ ফুট সমাচতুষ্কোণ—ইহা ছাড়া প্ৰতি দ্বারের নীচেও এক একটা কুঠারী আছে এবং প্রতি স্তম্ভের নীচেও এক একটা কুঠরী আছে। উৰ্দ্ধতলে আরোহণ করিবার নিমিত্ত দক্ষিণ পূর্ব ও উত্তর দিকে এক একটা পথ আছে, সে সকল পথের মধ্যে এখন কেবল উত্তর দিকেরটিই খোলা দেখিলাম। এই অট্টালিকাটি পাটলিবর্ণের গ্রেনাইট প্রস্তরে নিৰ্ম্মিত হওয়ায় কেমন যেন একটা মৌন গাম্ভীৰ্য্য—কেমন যেন একটা বিষাদের ছায়া ইহার সর্ববাঙ্গ ব্যাপিয়া বিরাজিত রহিয়াছে । চিকি হইতে প্ৰায় একমাইল দূরে বেগমপুর অবস্থিত, এখানে পাঠানস্থাপত্যের বহু প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ দেখিতে পাওয়া যায়। ফিরোজ সাহাবু, চিকি । See