পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/৫৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সূচীকাৰ্য্যের অপূর্ব নৈপুণ্য দেখিতে পাওয়া যায়, কি সুন্দর! তাহার ব্ৰাহ্মণটির বিনীত ব্যবহার তীর্থস্থলে সুদুর্লভ ; অর্থের জন্য কোনরূপ পীড়াপীড়ি দেখিলাম না, যাহারা যাহা ইচ্ছা, ভক্তিভরে দিয়া যাইতেছে। চৈতন্যদেবের জীবনের ন্যায় এইরূপ ধৰ্ম্মময় জীবন জগতের ইতিহাসে অতিশয় দুর্লভ। পুণ্যভূমি ভারতের ন্যায় জগতের আর কোনও দেশে এত অধিক স্বাৰ্থত্যাগী ধৰ্ম্মপ্ৰাণ ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করিয়াছেন কি না সন্দেহ। ভারতবর্ষকে ধৰ্ম্মভূমি বলিলেই অধিকতর উপযুক্ত হয়। বাসুদেব সার্বভৌমের বাড়ী দর্শন করিয়া কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর সম্মুখেই সমুদ্রের সুনীল সৌন্দৰ্য্য আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করিল। তখন সূৰ্য্যদেবের প্রখর কিরণে চারিদিক উত্তপ্ত হইয়া উঠিয়াছিল। e 53rf ******" পথের দুইধারে পয়সা আদায়ের জন্য নানা প্রকার অদ্ভুত কাণ্ড দেখিলাম, কেহ কেহ উত্তপ্ত বালুকারাশির মধ্যে সর্বাঙ্গ নিমজ্জিত । করিয়া যাত্ৰিগণের নিকট অর্থ প্রার্থনা করিতেছে—কোন কোন যাত্রী দুই একটি পয়সা দিতেছে-কেহবা দিতেছে না । তীর্থস্থলে অর্থব্যয় সম্বন্ধে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন না করিলে বড়ই প্ৰতারিত হইতে হয়। পুরীর নিকট সমুদ্রের দৃশ্য বড়ই সুন্দর। এমন লোক সংসারে অতি বিরল র্যাহার হৃদয়ে সমুদ্রের সীমান্তরহিত নীলাভ মূৰ্ত্তি দর্শন করিলে আনন্দের উদ্রেক না। হয়! কেমন সুন্দর ধারাবাহিকরূপে তরঙ্গের পর তরঙ্গ আসিয়া বেলাভূমির বালুকার দিকে ধাবমান হইতেছে—আবার চাহিয়া দেখা পালকের মধ্যে সাগর-বক্ষে বিলীন হইতেছে,-কোথায় সে তরঙ্গ ? সমুদ্রের এই ক্রীড়া । কৌতুক-এই অপূর্ব লহরী লীলা দেখিয়া মনে হইল “বেলানিলায় প্রসূত ভুজঙ্গাঃ মহোৰ্ম্মি বিস্ফর্জাণু নির্বিশেষা: ॥” (রঘুবংশ) কবি রবীন্দ্ৰনাথ পুরীতে সমূদ্র দর্শনে যে কবিতা লিখিয়াছেন তাহা পাঠ করিলে সমুদ্রের নীলিমা জড়িত তরঙ্গমালার প্রাণময় চেতনার আভাস পাওয়া যায়-এরূপ আর কিছুতেই হয় না। অন্ধ প্ৰকৃতির মধ্যে যে মানববুদ্ধির অগোচর একটা গুঢ় রহস্যময় জীবন আছে, তাহা কবি ভিন্ন আর কেন বুঝা 89.