পাতা:ভেজাল - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘুমন্ত দাদার ক্রিমির দোষে দাঁতে দাঁত ঘসার শব্দ মাধবী প্রায়ই শুনতে প্ৰায়। নির্মলেন্দুও মুখে তেমনি রোমাঞ্চকর শব্দ করছে। ‘নিজে থেকে ফিরে চলো, লক্ষ্মী মেয়ে! নইলে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাৰ । জান তো আমায় ?” “কী বলছিলাম ? হ্যা-আপনাকে আজকাল দেবতার মতো ভক্তি করি। সাড়ে দশটার গাড়িতে চলে যাবেন, আর হয়তো সুযোগ পাৰ না, প্ৰণামটা এখুনি করে রাখি।” সেইখানে হাঁটু পেতে বসে মাধবী প্ৰণাম করে। ব্যাপক প্ৰণাম। • সাণ্ডেল পরা পায়ে মাথা ঠেকিয়ে রাখে। কয়েক সেকেণ্ড, সোজা হয়ে ধীরে ধীরে পায়ে আঙুল বুলিয়ে মাথায় ঠেকায়। নির্মলেন্দু। হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে থাকে । এ সমস্তই অভিনয় । কিন্তু কার ক্ষমতা আছে। এ অভিনয়কে অগ্ৰাহ করার ? গরুর গাড়ি ধীরে ধীরে আরও কাছে এগিয়ে আসে। মাধবী উঠে দাড়ালে নির্মলেন্দু বলে, “একটু পাশের দিকে সরে দাড়াও, গাড়িটা ব্যাক করি।” সঙ্গী-সাখীরা বাড়িতে জমা হয়ে অপেক্ষা করছিল, সে ফেরামাত্র সকলে কোলাহল করে উঠল।-“কোথায় ছিলে এতক্ষণ ? আজকেই নাকি ফিরে যাবে? আজি যেও না। একটা রাত, শুধু আজকের রাতটা, একটু আনন্দ করি এসো।” নির্মলেন্দু বলল, “আনন্দ করব, গাড়িতে।” এক-একজন এক-একটি কাজের ভার নিয়ে চলে যায়। স্ত্রীলোক সংগ্ৰহ করতে কেউ, কেউ পানীয়, কেউ খাদ্য। গাড়ি ছাড়ার আধা ঘণ্টা আগে কামরা জুড়ে বসে শুধু উত্তেজনায় তাদের নেশা হয়েছে মনে হয়, স্ত্রীলোক তিনটি থেকে থেকে অকারণে খিলখিল করে হেসে ওঠে। নতুনত্ব এই, এই তো অ্যাডভেঞ্চার! ছোটবাবু ছাড়া কার মাথায় এ বুদ্ধি আসত ? V