পাতা:ভেজাল - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰস্তুত হতে গেলেন, বেলারানী খবর পেয়ে ক্টোস ফেঁাস করতে করতে ওপর থেকে নেমে এসে বললে, “তোমার কেমন ধারা বিবেচনা গগন ? না পারলে বলে দিলেই হত আসতে পারবে না, তুমি ছাড়া কি ঠাকুর নেই দেশে ?” “আমার মতো নেই। কেমন আছ দিদিমণি ?” মুখে জবাব দেবার দরকার নেই বলেই বেলারানী যেন নিজেকে জবাবের মতো সামনে দাড় করিয়ে রাখল। বিয়ের পর, ছেলে বিয়োবার পর, বেলারানী একেবারে বদলে গেছে। বিয়ের সময় তার চেহারাটি ছিল রুগ্ন বালকের মতো । সোনার হার অনায়াসে এদিক ওদিক দোল খেত। ছেলেটা এসে তাকে এমন করে দিয়েছে যে দেখলে মনে হয়, এখনো সে মা হয়নি, হতে চায়। ক্রমে ক্রমে পাওয়ার বদলে হঠাৎ পাওয়া এই সম্পদ নিয়ে বেলারানী আর বঁাচে না, তাকে চটিয়ে দিয়েও রাস্তার লোকের পর্যন্ত তাকিয়ে যাওয়া চাই। “মরণ তোমার ”-বলে অভিশাপ দিয়ে সরে যাবার সুযোগ না পেলে মনটা খারাপ হয়ে যায়। বাপের বাড়ি এসেই বেলা সকলের আগে পাড়ার চেনা মানুষদের বাড়ি ঘুরে এসেছে, বিয়ের আগে তেরো বছরের ছেলের মতো আঠারো বছরের নিস্ব বেলাকে দেখে যারা না জানি কি ভাবত । বিশেষভাবে আদর করে বাড়িতে ডেকে এনেছে সেই সব বিবাহিতা ও অবিবাহিতা সঙ্গিনীদের, যাদের হাসাহসি তার রক্তকে তেতো করে দিয়েছিল। বিয়ের পর, ছেলে হবার পর, গগনও তাকে আর দেখে নি। ব্যাকুল হয়ে সিড়ি ভেঙ্গে নিচে নেমে বেলারানী ছোট ছোট নিশ্বাস ফেলছে। বুক দুরদুর করছে বেলারানীর। গগনের কি চোখ নেই? তাকে জিজ্ঞেস করা, সে কেমন আছে ! তবে হ্যা, অনেক দেরিতে দেরিতে পলক পড়ছে বটে। গগনের চোখে, দৃষ্টি বুলিয়ে বুলিয়ে কি যেন সে মাগিয়ে দিচ্ছে সারা গায়ে, গা যাতে শিরশির করে। 8R