পাতা:ময়ূখ - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৭৪
ময়ূখ

শ্যামল তৃণক্ষেত্রের মধ্যভাগে একটি ক্ষুদ্র নির্ম্মল শ্বেতমর্ম্মরনির্ম্মিত সমাধি, কালিন্দীর নীলাম্বুরাশি আকুল হইয়া সেই সমাধির পাদমূলে আছাড়িয়া পড়িতেছিল। সমাধি আলিঙ্গন করিয়া শুভ্রবসনপরিহিত একজন প্রৌঢ় মুসলমান স্থির হইয়া বসিয়াছিল এবং তাহার পদতলে শীর্ণদেহা মলিনবেশা এক অন্ধ রমণী নীরবে অশ্রু বিসর্জ্জন করিতেছিল। নৌকার আরোহিদ্বয় ও নাবিক তাঁহাদিগকে দেখিয়া দূরে দাঁড়াইল।;

 পুরুষ জিজ্ঞাসা করিল, “ও কে ভূবন?” ভূবন অতি ধীরে কহিল, “বলিতে পারি না মহারাজ!”

 রমণী অস্ফুট স্বরে কহিল, “কাছে গিয়া কাজ নাই, দূর হইতে দেখিয়া ফিরিয়া যাই।”

 পুরুষ জিজ্ঞাসা করিল, “কেন ললিতা?”

 “উনি কে বুঝিতে পারিতেছ না?”

 “না।”

 “আমি দেখিয়াই বুঝিয়াছি।”

 “কে ললিতা?”

 “আর কে? স্বয়ং বাদশাহ।”

 এই সময়ে সেই প্রৌঢ় মুসলমান সমাধিবক্ষ হইতে মুখ তুলিল। ময়ুখ বিস্মিত হইয়া দেখিলেন যে হিন্দুস্থানের একচ্ছত্র সম্রাট বাদশাহ্‌ শাহ্‌জহান জনশূন্য প্রান্তরমধ্যে শূন্য মস্তকে সমাধিপার্শ্বে উপবিষ্ট আছেন।