পাতা:মহাত্মা গান্ধীর কারাকাহিনী - অনাথ নাথ বসু.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কারাকাহিনী।
৪৭

তাহার মধ্যে আমিও একজন। দারোগা বলিল, আমি দ্বিতীয় বিভাগের পায়খানায় গেলে কোন ক্ষতি নাই, —সুতরাং আমি তাহাই গেলাম। সেখানেও খুব ভিড়, পায়খানাও খোলা,—দরজা নাই। আমি বসিতেই এক লম্বা চওড়া, রুক্ষ্মদর্শন, বিকটাকার কাফ্রি অসিয়া আমাকে উঠিতে বলিল ও গালি দিতে লাগিল; আমি বলিলাম, এখনই উঠিতেছি। কিন্তু ইহাতেও সে হাত ধরিয়া উঠাইল এবং বাহিরে ঠেলিয়া ফেলিয়া দিল। ভাগ্যক্রমে চৌকাট ধরিয়া ফেলায় মাটীতে পড়িয়া গেলাম না। আমি ইহাতে অস্থির হই নাই, হাসিয়া চলিয়া যাইতেছিলাম, কিন্তু কয়েকজন ভারতবাসী আমার অবস্থা দেখিয়া চীৎকার করিয়া উঠিল। জেলে তাহারা ত’ কোন সাহায্যই করিতে পারিত না, তবে নিজেদের নিরুপায় অবস্থা দেখিয়া রাগিয়া উঠিত অবশ্য। পরে বুঝিলাম, অন্য ভারতবাসীরও ত’ এইরূপ দুঃখ ভোগ করিতে হয়। এ বিষয়ে গবর্ণরের সহিত আমার কথাবার্ত্তা হইল, বলিলাম—ভারতবাসীদের জন্য আলাদা পায়খানা করিয়া দেওয়া দরকার; আর, কাফ্রি কয়েদিদের সঙ্গে ভারতবাসীদের যেন কখনও একত্র, রাখা না হয়। গবর্ণর তখনই বড় জেলের ছয়টি পায়খানা ভারতীয় কয়েদীর জন্য আলাদা করিয়া রাখিবার আদেশ দিলেন। তখন হইতে এ কষ্ট দূর হইল। চারদিন পায়খানা যাইতে না পাইয়া আমারও শরীর যথেষ্ট খারাপ হইয়াছিল।

 জোহান্সবর্গে থাকিবার সময় আমাকে তিন চার বার আদালতে যাইতে হয়; সেখানে মিঃ পোলক ও আমার পুত্রের সহিত দেখা করিবার অনুমতি পাইয়াছিলাম; কখনও কখনও অন্য কাহারও সঙ্গে দেখা হইত। আদালত আমাকে বাড়ী হইতে খাবার আনিবার আদেশও দিয়াছিলেন, তাঁহাতে মিঃ কেলেনবেক আমার জন্য রুটী, পনীর প্রভৃতি আনিয়া দিতেন।