পাতা:মহাত্মা গান্ধীর কারাকাহিনী - অনাথ নাথ বসু.pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কারাকাহিনী।
৭১

অনুমতি পাওয়ার জন্য আমায় যে কত কষ্ট পাইত হইয়াছিল, তাহা আর এখানে বলার প্ররোজন নাই। শেষে হইল এই, আমার খাবার পরিবর্ত্তন হইল, আর খোলা বাতাসে কাল করার অনুমতি পাইলাম। লাভটা দুরকমেই হইল। যখন কম্বল সেলাই করার কাজ পাইয়াছিলাম তখন মনে হইয়াছিল, এই এক কাজ শেষ করিতে আমার সাত দিন লাগিবে আর ততক্ষণ আমারও শেষ হইয়া যাইবে। কিন্তু হইল ঠিক্ উল্টা। প্রথম কম্বল বোনা শেষ হইবার পরে আমি এক এক জোড়া কম্বল দুই দিনেই শেষ করিতে লাগিলাম। তখন অন্য কাজও পাওয়া গেল—যেমন, বানীয়ানে শশম ভরা, জেলের টীকিটের জন্য পকেট তৈরী করা, ইত্যাদি।

 আমি অনেক সত্যাগ্রহীকেই বলিয়াছিলাম, যদি স্বাস্থ্য নষ্ট করিয়া, রোগ লইয়া জেলের বাহিরে যাইতে হয়, তবে আমাদের সত্যাগ্রহ দুর্ব্বল বলিয়া প্রতিপন্ন হইবে। ধৈর্য্য ধরিয়া আমরা সত্যপন্থা অবলম্বন করিতে পারি। চিন্তা করিলেও স্বাস্থ্য খারাপ হয়। সত্যাগ্রহীদের ত’ জেলকে বাড়ী মনে করাই উচিত।

 আমি এই ভাবিয়াই কষ্ট পাইতাম যে আমাকেই শেষে যেন কোনও রকমে রোগ নিয়া বাহির হইতে না হয়। পাঠকের স্মরণ রাখা উচিত, আমার জন্য যে ঘিএর অনুমতি হইয়াছিল তাহার জন্য সে চেষ্টা না করিলে সত্যাগ্রহে আমার শরীর খারাপ হইত। কিন্তু অন্যের বেলায় এ নিয়ম থাটে না। প্রত্যেক কয়েদী যখন একলা থাকে তখন নিজের অসুবিধা দূর করিবার চেষ্টা করিতে পারে। প্রিটোরিয়ায় আমার এরূপ না করার বিশেষ কারণ ছিল। এই কারণেই আমি শুধু নিজের জন্য ঘি লওয়ার অনুমতি মানিয়া লইতে পারি নাই।