পাতা:মহাপৃথিবী - জীবনানন্দ দাশ.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নিরালোক

একবার নক্ষত্রের দিকে চাই— একবার প্রান্তরের দিকে
আমি অনিমিখে।
ধানের খেতের গন্ধ মুছে গেছে কবে
জীবনের থেকে যেন; প্রান্তরের মতন নীরবে
বিচ্ছিন্ন খড়ের বোঝা বুকে নিয়ে ঘুম পায় তার;
নক্ষত্রেরা বাতি জ্বেলে— জ্বেলে— জ্বেলে— ‘নিভে গেলে— নিভে গেলে?’
ব’লে তারে জাগায় আবার;
জাগায় আবার।
বিক্ষত খড়ের বোঝা বুকে নিয়ে— বুকে নিয়ে ঘুম পায় তার,
ঘুম পায় তার।

অনেক নক্ষত্রে ভ’রে গেছে সন্ধ্যার আকাশ— এই রাতের আকাশ;
এইখানে ফাল্গুনের ছায়ামাখা ঘাসে শুয়ে আছি;
এখন মরণ ভালো,— শরীরে লাগিয়া রবে এই সব ঘাস;
অনেক নক্ষত্র রবে চিরকাল যেন কাছাকাছি।

কে যেন উঠিল হেঁচে,— হামিদের মরখুটে কানা ঘোড়া বুঝি!
সারাদিন গাড়ি-টানা হ’লো ঢের,— ছুটি পেয়ে জ্যোৎস্নায় নিজ মনে
খেয়ে যায় ঘাস;
যেন কোনো ব্যথা নাই পৃথিবীতে,— আমি কেন তবে মৃত্যু খুঁজি?
‘কেন মৃত্যু খোঁজো তুমি?’ চাপা ঠোঁটে বলে দূর কৌতুকী আকাশ।

ঝাউফলে ঘাস ভ’রে— এখানে ঝাউয়ের নিচে শুয়ে আছি ঘাসের উপরে;
কাশ আর চোরকাটা ছেড়ে দিয়ে ফড়িং চলিয়া গেছে ঘরে।
সন্ধ্যার নক্ষত্র, তুমি বলো দেখি কোন পথে কোন ঘরে যাবো!
কোথায় উদ্যম নাই, কোথায় আবেগ নাই,— চিন্তা স্বপ্ন ভুলে গিয়ে
শাস্তি আমি পাবো?

১৩