পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৮
মহাভারত

নিলেন, তাঁদের মধ্যে এক ব্রাহ্মণী তাঁর ঊরুদেশে গর্ভ গোপন ক’রে রাখলেন। ক্ষত্রিয়রা জানতে পেরে সেই গর্ভ নষ্ট করতে এলেন, তখন সেই ব্রাহ্মণীর ঊরু ভেদ ক’রে মধ্যাহ্ণসূর্যের ন্যায় দীপ্তিমান পুত্র প্রসূত হ’ল, তার তেজে ক্ষত্রিয়গণ অন্ধ হয়ে গেলেন। তাঁরা অনুগ্রহ ভিক্ষা করলে ব্রাহ্মণী বললেন, তোমরা আমার ঊরুজাত পুত্র ঔর্বকে প্রসন্ন কর। ক্ষত্রিয়গণের প্রার্থনায় ঔর্ব তাঁদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলেন। তার পর পিতৃগণের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবার জন্য তিনি ঘোর তপস্যা করতে লাগলেন। ঔর্বকে সর্বলোকবিনাশে উদ্যত দেখে পিতৃগণ এসে বললেন, বৎস, ক্রোধ সংবরণ কর। আমরা স্বর্গারোহণের জন্য উৎসুক ছিলাম, কিন্তু আত্মহত্যায় স্বর্গলাভ হয় না, সেজন্য স্বেচ্ছায় ক্ষত্রিয়দের হাতে মরেছি। আমরা ইচ্ছা করলেই ক্ষত্রিয়সংহার করতে পারতাম। তার পর পিতৃগণের অনুরোধে ঔর্ব তাঁর ক্রোধাগ্নি সমুদ্রজলে নিক্ষেপ করলেন। সেই ক্রোধ ঘোটকীর[১] মস্তকরূপে অগ্নি উদ্‌গার করে সমুদ্রজল পান করে।

 বশিষ্ঠের কাছে এই উপাখ্যান শুনে পরাশর তাঁর ক্রোধ সংবরণ করলেন, কিন্তু তিনি রাক্ষসসত্র যজ্ঞ আরম্ভ করলেন, তাতে আবালবৃদ্ধ সকল রাক্ষস দগ্ধ হ’তে লাগল। অত্রি, পুলস্ত্য, পুলহ, ক্রতু ও মহাক্রতু রাক্ষসদের প্রাণরক্ষার জন্য সেখানে উপস্থিত হলেন। পুলস্ত্য[২] বললেন, বৎস, যারা তোমার পিতার মৃত্যুর বিষয় কিছুই জানে না সেই নির্দোষ রাক্ষসদের মেরে তোমার কি আনন্দ হচ্ছে? তুমি আমার বংশনাশ করো না। শক্ত্রি শাপ দিয়েই নিজের মৃত্যু ডেকে এনেছিলেন। এখন তিনি তাঁর ভ্রাতাদের সঙ্গে দেবলোকে সাথে আছেন। পুলস্ত্যের কথায় পরাশর তাঁর যজ্ঞ শেষ করলেন।


 অর্জুন জিজ্ঞাসা করলেন, কল্মাষপাদ কি কারণে তাঁর মহিষীকে বশিষ্ঠের নিকট পত্রোৎপাদনের জন্য নিযুক্ত করেছিলেন? গন্ধর্বরাজ বললেন, রাজা কল্মাষপাদ যখন রাক্ষসরূপে বনে বিচরণ করছিলেন তখন এক ব্রাহ্মণ ও তাঁর পত্নীকে দেখতে পান। রাজা সেই ব্রাহ্মণকে খেয়ে ফেলেন, তাতে ব্রাহ্মণী শাপ দেন, স্ত্রীসংগম করলেই তোমার মৃত্যু হবে। যাঁকে তুমি পুত্রহীন করেছ সেই বশিষ্ঠই তোমার পত্নীতে সন্তান উৎপাদন করবেন। এই কারণেই কল্মাষপাদ তাঁর মহিষীকে বশিষ্ঠের কাছে পাঠিয়েছিলেন।

  1. বড়বা।
  2. ইনি রাবণ প্রভৃতির পূর্বপুরুষ।