পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সভাপর্ব

॥ সভাক্রিয়াপর্বাধ্যায়॥

১। ময় দানবের সভানির্মাণ

 কৃষ্ণ ও অর্জুন নদীতীরে উপবিষ্ট হ’লে ময় দানব কৃতাঞ্জলিপটে সবিনয়ে অর্জুনকে বললেন, কৌন্তেয়, আপনি কৃষ্ণের ক্রোধ আর অগ্নির দহন থেকে আমাকে রক্ষা করেছেন। আপনার প্রত্যুপকার কি করব বলুন। অর্জুন উত্তর দিলেন, তোমার কর্তব্য সবই তুমি করেছ, তোমার মঙ্গল হ’ক, তোমার আর আমার মধ্যে যেন সর্বদা প্রীতি থাকে: এখন তুমি যেতে পার। ময় বললেন, আমি দানবগণের বিশ্বকর্মা ও মহাশিল্পী, আপনাকে তুষ্ট করবার জন্য আমি কিছু করতে ইচ্ছা করি। অর্জুন বললেন, প্রাণরক্ষার জন্য তুমি কৃতজ্ঞ হয়েছ, এ-অবস্থায় তোমাকে দিয়ে আমি কিছ করাতে চাই না। তোমার অভিলাষ ব্যর্থ করতেও চাই না, তুমি কৃষ্ণের জন্য কিছু কর, তাতেই আমার প্রত্যুপকার হবে।

 ময় দানবের অনুরোধ শুনে কৃষ্ণ একটু ভেবে বললেন, শিল্পিশ্রেষ্ঠ, যদি তুমি আমাদের প্রিয়কার্য করতে চাও তবে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরের জন্য এমন এক সভা নির্মাণ কর যার অনুকরণ মাননুষের অসাধ্য। তার পর কৃষ্ণ ও অর্জুনে ময়কে যুধিষ্ঠিরের কাছে নিয়ে গেলেন। কিছুকাল গত হ'লে সবিশেষ চিন্তার পর ময় সভানির্মাণে উদ্‌যোগী হলেন এবং পুণ্যদিনে মাঙ্গলিক কার্য সম্পন্ন ক’রে ব্রাহমণগণকে সঘৃত পায়স ও বহূবিধ ধনরত্ন দিয়ে তুষ্ট করলেন। তার পর তিনি চতুর্দিকে দশ হাজার হাত পরিমাপ ক'রে সর্ব ঋতুর উপযুক্ত সভাস্থান নির্বাচন করলেন।

 জনার্দন কৃষ্ণ এতদিন ইন্দ্রপ্রস্থে সুখে বাস করছিলেন, এখন তিনি পিতার কাছে যেতে ইচ্ছুক হলেন। তিনি পিতৃষ্বসা কুন্তীর চরণে প্রণাম ক’রে ভগিনী সুভদ্রার কাছে সস্নেহে বিদায় নিলেন এবং দ্রৌপদীর সঙ্গে দেখা ক’রে তাঁর হাতে সুভদ্রাকে সমর্পণ করলেন। তার পর তিনি স্বস্তিবাচন করিয়ে ব্রাহ্মণদের দক্ষিণা দিলেন এবং শূভমুহূর্তে স্বর্ণভূষিত দ্রুতগামী রথে আরোহণ করলেন। কৃষ্ণের সারথি দারুককে সরিয়ে দিয়ে যুধিষ্ঠির নিজেই বল্‌গা হাতে নিলেন, অর্জুনও শ্বেত