পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৮
মহাভারত

প্রত্যুপকার করতে ইচ্ছা করি। এই ব’লে রাক্ষসী অন্তর্হিত হ’ল। জরা রাক্ষসী সেই কুমারকে সন্ধিত অর্থাৎ যোজিত করেছিল সেজন্য তার নাম জরাসন্ধ হ’ল।

 যথাকালে জরাসন্ধকে রাজপদে প্রতিষ্ঠিত ক’রে বৃহদ্রথ তাঁর দুই পত্নীর সঙ্গে তপোবনে চলে গেলেন। চণ্ডকৌশিকের আশীর্বাদে জরাসন্ধ সকল রাজার উপর প্রভুত্ব এবং ত্রিপুরারি মহাদেবকে সাক্ষাৎ দর্শনের শক্তি লাভ করলেন। কংস হংস ও ডিম্ভকের মৃত্যুর পর আমার সঙ্গে জরাসন্ধের প্রবল শত্রুতা হ’ল। তিনি একটা গদা নিরেনব্বই বার ঘুরিয়ে গিরিব্রজ থেকে মথুরার অভিমুখে নিক্ষেপ করেন, সেই গদা নিরেনব্বই যোজন দূরে পতিত হয়। মথুরার নিকটবর্তী সেই স্থানের নাম গদাবসান।


॥জরাসন্ধবধপর্বাধ্যায়॥

৫। জরাসন্ধবধ

 তার পর কৃষ্ণ বললেন, জরাসন্ধের প্রধান দুই সহায় হংস আর ডিম্ভক মরেছে, কংসকেও আমি নিহত করেছি, অতএব জরাসন্ধবধের এই সময়। কিন্তু সুরাসুরও সম্মুখযুদ্ধে তাঁকে জয় করতে পারেন না, সেজন্য মল্লযুদ্ধেই তাঁকে মারতে হবে। আমি কৌশলজ্ঞ, ভীম বলবান, আর অর্জুন আমাদের রক্ষক, আমরা তিনজন মিলে মগধরাজকে জয় করতে পারব। আমরা যদি নির্জন স্থানে তাঁকে আহ্বান করি তবে তিনি নিশ্চয় আমাদের একজনের সঙ্গে যুদ্ধ করবেন। তিনি বাহুবলে দর্পিত সেজন্য আমার বা অর্জনের সঙ্গে যুদ্ধ করা অপমানজনক মনে করবেন, ভীমসেনের প্রতিদ্বন্দ্বী হ’তেই তাঁর লোভ হবে। মহাবল ভীম নিশ্চয় তাঁকে বধ করতে পারবেন। যদি আমার উপর আপনার বিশ্বাস থাকে, তবে ভীমার্জুনকে আমার সঙ্গে যেতে দিন।

 যুধিষ্ঠির বললেন, অচ্যুত, তুমি পাণ্ডবদের প্রভু, আমরা তোমার আশ্রিত, তুমি যা বলবে তাই করব। যখন আমরা তোমার আজ্ঞাধীন তখন জরাসন্ধ নিশ্চয় নিহত হবেন, রাজারা মুক্তি পাবেন, আমার রাজসূয় যজ্ঞ সম্পন্ন হবে। জগন্নাথ, তুমি আমাদের কার্য শীঘ্র নির্বাহের জন্য মনোযোগী হও। কৃষ্ণ বিনা অর্জুন অথবা অর্জুন বিনা কৃষ্ণ থাকতে পারেন না, কৃষ্ণার্জুনের অজেয় কেউ নেই। আর, তোমাদের সঙ্গে মিলিত হ’লে বীরশ্রেষ্ঠ শ্রীমান বৃকোদর কি না করতে পারেন?