পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সভাপর্ব
১২১

১১। শিশুপাল বধ—রাজসূয় যজ্ঞের সমাপ্তি

 শিশুপাল বললেন, জনার্দন, তোমাকে আহ্বান করছি, আমার সঙ্গে যুদ্ধ কর, সমস্ত পাণ্ডবদের সঙ্গে আজ তোমাকেও বধ করব। তুমি রাজা নও, কংসের দাস, পূজার অযোগ্য। যে পাণ্ডবরা বাল্যকাল থেকে তোমার অর্চনা করছে তারাও আমার বধ্য।

 কৃষ্ণ মৃদুবাক্যে সমবেত নৃপতিবৃন্দকে বললেন, রাজগণ, যাদবরা এই শিশুপালের কোনও অপকার করে নি তথাপি এ আমাদের শত্রুতা করেছে। আমরা যখন প্রাগ্‌জ্যোতিষপুরে যাই তখন আমাদের পিতৃষ্বসার পুত্র হয়েও এই নৃশংস দ্বারকা দগ্ধ করেছিল। ভোজরাজ রৈবতকে বিহার করছিলেন, তাঁর সহচরগণকে শিশুপাল হত্যা ও বন্ধন ক’রে নিজ রাজ্যে চ’লে যায়। এই পাপাত্মা আমার পিতার অশ্বমেধ যজ্ঞের অশ্ব হরণ করেছিল। বভ্রুর ভার্যা দ্বারকা থেকে সৌবীর দেশে যাচ্ছিলেন, সেই অকামা নারীকে এ হরণ করেছিল। এই নৃশংস ছদ্মবেশে মাতুলকন্যা ভদ্রাকে নিজ মিত্র করুষ রাজার জন্য হরণ করেছিল। আমার পিতৃষ্বসার জন্য আমি সব সয়েছি, কিন্তু শিশুপাল আজ আপনাদের সমক্ষে আমার প্রতি যে আচরণ করলে তা আপনারা দেখলেন। এই অন্যায় আমি ক্ষমা করতে পারব না। এই মূঢ় রুক্মিণীকে প্রার্থনা করেছিল, কিন্তু শূদ্র যেমন বেদবাক্য শুনতে পায় না এও তেমনি রুক্মিণীকে পায় নি।

 বাসুদেবের কথা শুনে রাজারা শিশুপালের নিন্দা করতে লাগলেন। শিশুপাল উচ্চ হাস্য ক’রে বললেন, কৃষ্ণ, পূর্বে রুক্মিণীর সঙ্গে আমার সম্বন্ধ হয়েছিল এই কথা এখানে বলতে তোমার লজ্জা হ’ল না? নিজের স্ত্রী অন্যপূর্বা ছিল এই কথা তুমি ভিন্ন আর কে সভায় প্রকাশ করতে পারে? তুমি ক্ষমা কর বা না কর, ক্রুদ্ধ হও বা প্রসন্ন হও, তুমি আমার কি করতে পার?

 তখন ভগবান মধুসূদন চক্র দ্বারা শিশুপালের দেহ থেকে মস্তক বিচ্ছিন্ন করলেন, বজ্রাহত পর্বতের ন্যায় মহাবাহু শিশুপাল ভূপতিত হলেন। রাজারা দেখলেন, আকাশ থেকে সূর্যের ন্যায় একটি উজ্জ্বল তেজ শিশুপালের দেহ থেকে নির্গত হ’ল এবং কমলপত্রাক্ষ কৃষ্ণকে প্রণাম ক’রে তাঁর দেহে প্রবেশ করলে। বিনা মেঘে বৃষ্টি ও বজ্রপাত হ’ল, বসুন্ধরা কেঁপে উঠলেন, রাজারা কৃষ্ণকে দেখতে লাগলেন কিন্তু তাঁদের বাক্‌স্ফূর্তি হ’ল না। কেউ ক্রোধে হস্তপেষণ ও ওষ্ঠদংশন করলেন, কেউ নির্জন স্থানে গিয়ে কৃষ্ণের প্রশংসা করলেন, কেউ মধ্যস্থ