পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সভাপর্ব
১৩১

 শকুনি বললেন, রাজা, কিছু ধন অবশিষ্ট থাকতে তুমি নিজেকে পণ রেখে হারলে, এতে পাপ হয়। তোমার প্রিয়া পাঞ্চালী এখনও বিজিত হন নি, তাঁকে পণ রেখে নিজেকে মুক্ত কর। যুধিষ্ঠির বললেন, যিনি অতিখর্বা বা অতিকৃষ্ণা নন, কৃশা বা রক্তবর্ণা নন, যিনি কৃষ্ণকুঞ্চিতকেশী, পদ্মপলাশাক্ষী, পদ্মগন্ধা, রূপে লক্ষ্মীসমা, সর্বগুণান্বিতা, প্রিয়ংবদা, সেই দ্রৌপদীকে পণ রাখছি।

 ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরের এই কথা শুনে সভা বিক্ষুব্ধ হ’ল, বৃদ্ধগণ ধিক ধিক বললেন, ভীষ্ম দ্রোণ কৃপ প্রভৃতি ঘর্মাক্ত হলেন, বিদুর মাথায় হাত দিয়ে মোহগ্রস্তের ন্যায় অধোবদনে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলেন। ধৃতরাষ্ট্র মনোভাব গোপন করতে পারলেন না, হৃষ্ট হয়ে বার বার জিজ্ঞাসা করলেন, কি জিতলে, কি জিতলে? কর্ণ দুঃশাসন প্রভৃতি আনন্দ প্রকাশ করতে লাগলেন, অন্যান্য সদস্যগণের চক্ষু থেকে অশ্রুপাত হ’ল। শকুনি পাশা ফেলে বললেন, জিতেছি।

 দুর্যোধন বিদুরকে বললেন, পাণ্ডবপ্রিয়া দ্রৌপদীকে নিয়ে আসুন, সেই অপুণ্যশীলা অন্য দাসীদের সঙ্গে গৃহমার্জনা করুক। বিদুর বললেন, তোমার মতন লোকেই এমন কথা বলতে পারে। কৃষ্ণা দাসী হ’তে পারেন না, কারণ তাঁকে পণ রাখবার সময় যুধিষ্ঠিরের স্বামিত্ব ছিল না। মূর্খ, মহাবিষ ক্রুদ্ধ সর্প তোমার মাথার উপর রয়েছে, তাদের আরও কুপিত ক’রো না, যমালয়ে যেয়ো না। ধৃতরাষ্ট্রের পুত্র নরকের ভয়ংকর দ্বারে উপস্থিত হয়েও তা বুঝছে না, দুঃশাসন প্রভৃতিও তার অনুসরণ করছে।

১৬। দ্রৌপদীর নিগ্রহ—ভীমের শপথ—ধৃতরাষ্ট্রের বরদান

 দুর্যোধন তাঁর এক অনুচরকে বললেন, প্রাতিকামী, তুমি দ্রৌপদীকে এখানে নিয়ে এস, তোমার কোনও ভয় নেই। সূতবংশীয় প্রাতিকামী দ্রৌপদীর কাছে গিয়ে বললে, যাজ্ঞসেনী, যুধিষ্ঠির দ্যূতসভায় ভীমার্জুন-নকুল-সহদেবকে এবং নিজেকে পণ রেখে হেরে গেছেন। আপনাকেও তিনি পণ রেখেছিলেন, দুর্যোধন অপনাকে জয় করেছেন। আপনি আমার সঙ্গে আসুন। দ্রৌপদী বললেন, সূতপত্র, তুমি দ্যূতকার যুধিষ্ঠিরকে জিজ্ঞাসা ক’রে এস—তিনি আগে নিজেকে না আমাকে হেরেছিলেন?

 প্রাতিকামী সভায় এসে দ্রৌপদীর প্রশ্ন জানালে যুধিষ্ঠির প্রাণহীনের ন্যায় ব’সে রইলেন, কিছই উত্তর দিলেন না। দুর্যোধন বললেন, পাঞ্চালী নিজেই এখানে এসে প্রশ্ন করুন। প্রাতিকামী আবার গেলে দ্রৌপদী বললেন, তুমি ধর্মাত্মা নীতিমান