বা কেবল অর্থে বা কেবল কামে আসক্ত হওয়া ভাল নয়, তিনটিরই সেবা করা উচিত। শাস্ত্রকাররা বলেছেন, পূর্বাহ্ণে ধর্মের, মধ্যাহ্ণে অর্থের এবং সায়াহ্ণে কামের চর্চা করবে। আরও বলেছেন, প্রথম বয়সে কামের, মধ্য বয়সে অর্থের, এবং শেষ বয়সে ধর্মের আচরণ করবে। যাঁরা মুক্তি চান তাঁদের পক্ষেই ধর্ম-অর্থ-কাম বর্জন করা বিধেয়, গৃহবাসীর পক্ষে এই ত্রিবর্গের সেবাই শ্রেয়। মহারাজ, আপনি হয় সন্ন্যাস নিন না হয় ধর্ম-অর্থ-কামের চর্চা করুন, এই দুইএর মধ্যবর্তী অবস্থা আতুরের জীবনের ন্যায় দুঃখময়। জগতের মূল ধর্ম ধর্মের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কিছু নেই, কিন্তু বহু অর্থ থাকলেই ধর্মকার্য করা যায়। ক্ষত্রিয়ের পক্ষে বল আর উৎসাহই ধর্ম, ভিক্ষা বা বৈশ্য-শদ্রের বৃত্তি বিহিত নয়। আপনি ক্ষত্রিয়োচিত দৃঢ়হহৃদয়ে শৈথিল্য ত্যাগ ক’রে বিক্রম প্রকাশ করুন, ধুরন্ধরের ন্যায় ভার বহন করুন। কেবল ধর্মাত্মা হ’লে কোনও রাজাই রাজ্য ধন ও লক্ষ্মী লাভ করতে পারেন না। বলবানরা কপটতার দ্বারা শত্রু জয় করেন, আপনিও তাই করুন। কৃষক যেমন অল্প পরিমাণ বীজের পরিবর্তে বহু শস্য পায়, বুদ্ধিমান সেইরূপ অল্প ধর্ম বিসর্জন দিয়ে বৃহৎ ধর্ম লাভ করেন। আমরা যদি কৃষ্ণ প্রভৃতি মিত্রগণের সঙ্গে মিলিত হয়ে যুদ্ধ করি তবে অবশ্যই রাজ্য উদ্ধার করতে পারব।
বধিষ্ঠির বললেন, তুমি আমাকে বাক্যবাণে বিদ্ধ করছ তার জন্য তোমার দোষ দিতে পারি না, আমার অন্যায় কর্মের ফলেই তোমাদের বিপদ হয়েছে। আমি দুর্যোধনের রাজ্য জয় করবার ইচ্ছায় দ্যূতক্রীড়ায় প্রবৃত্ত হয়েছিলাম, কিন্তু আমার সরলতার সুযোগে ধূর্ত শকুনি শঠতার দ্বারা আমাকে পরাস্ত করেছিল। দুর্যোধন আমাদের দাস করেছিল, দ্রৌপদীই তা থেকে আমাদের উদ্ধার করেছেন। দ্বিতীয়বার দ্যূতক্রীড়ায় যে পণ নির্ধারিত হয়েছিল তা আমি মেনে নিয়েছিলাম, সেই প্রতিজ্ঞা এখন লঙ্ঘন করতে পারি না। তুমি দ্যূতসভায় আমার বাহু দগ্ধ করতে চেয়েছিলে, অর্জুন তোমাকে নিরস্ত করেন। সেই সময়ে তুমি তোমার লৌহগদা পরিষ্কার করছিলে, কিন্তু তখনই কেন তা প্রয়োগ করলে না? আমার প্রতিজ্ঞার সময়ে কেন আমাকে বাধা দিলে না? উপযুক্ত কালে কিছু না করে এখন আমাকে ভর্ৎসনা ক’রে লাভ কি? লোকে বীজরোপণ ক’রে যেমন ফলের প্রতীক্ষা করে, তুমিও সেইরূপ ভবিষ্যৎ সুখোদয়ের প্রতীক্ষায় থাক।
ভীম বললেন, মহারাজ, যদি তের বৎসর প্রতীক্ষা করতে হয় তবে তার মধ্যেই আমাদের আয়ু শেষ হবে। শ্রোত্রিয় ব্রাহ্মণ ও পণ্ডিতমূর্খের ন্যায় আপনার বুদ্ধি শাস্ত্রের অনুসরণ ক’রে নষ্ট হয়ে গেছে। আপনি ব্রাহ্মণের ন্যায় দয়ালু হয়ে