পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
১৫৯

 স্বস্ত্যয়নেব পর অর্জুন সশস্ত্র হয়ে যাত্রার উদ্‌যোগ করলেন। দ্রৌপদী তাঁকে বললেন, পার্থ, আমাদের সুখ দুঃখ জীবন মরণ রাজ্য ঐশ্বর্য সবই তোমার উপর নির্ভর করছে। তোমার মঙ্গল হ’ক, বলবানদের সঙ্গে তুমি বিরোধ করো না। জয়লাভের জন্য যাত্রা কর, ধাতা ও বিধাতা তোমাকে কুশলে নীরোগে রাখুন।

 অর্জুন হিমালয় ও গন্ধমাদন পার হয়ে ইন্দ্রকীল পর্বতে উপস্থিত হলেন। সেখানে তিনি আকাশবাণী শুনলেন—তিষ্ঠ। অর্জুন দেখলেন, পিঙ্গলবর্ণ কৃশকায় জটাধারী এক তপস্বী বৃক্ষমূলে ব’সে আছেন। তিনি বললেন, বৎস, তুমি কে? অস্ত্রধারী হয়ে কেন এখানে এসেছ? এই শান্ত তপোবনে অস্ত্রের প্রয়োজন নেই, তুমি ধনু ত্যাগ কর, তপস্যার প্রভাবে তুমি পরমগতি পেয়েছ। অর্জুনকে অবিচলিত দেখে তপস্বী সহাস্যে বললেন, আমি ইন্দ্র, তোমার মঙ্গল হক, তুমি অভীষ্ট স্বর্গ প্রার্থনা কর। অর্জুন কৃতাঞ্জলি হয়ে বললেন, ভগবান, আমাকে সর্ববিধ অস্ত্র দান করুন, আর কিছুই আমি চাই না। যদি আমার ভ্রাতাদের বনে ফেলে রাখি এবং শত্রুর উপর প্রতিশোধ নিতে না পারি তবে আমার অকীর্তি সর্বত্র চিরস্থায়ী হবে। তখন ইন্দ্র বললেন, বৎস, তুমি যখন ভূতনাথ ত্রিলোচন শূলধর শিবের দর্শন পাবে তখন সমস্ত দিব্য অস্ত্র তোমাকে দেব। এই বলে ইন্দ্র অদৃশ্য হলেন।


॥কৈরাতপর্বাধ্যায়॥

১০। কিরাতবেশী মহাদেব ― অর্জুনের দিব্যাস্ত্রলাভ

 অর্জুন এক ঘোর বনে উপস্থিত হয়ে আকাশে শঙ্খ ও পটহের ধ্বনি শুনতে পেলেন। তিনি সেখানে কঠোর তপস্যায় নিরত হ’লে মহর্ষিগণ মহাদেবকে জানালেন। মহাদেব কাঞ্চনতরুর ন্যায় উজ্জ্বল কিরাতের বেশ ধারণ করে পিনাকহস্তে দর্শন দিলেন। অনুরূপ বেশে দেবী উমা, তাঁর সহচরীবৃন্দ এবং ভূতগণ অনুগমন করলেন। ক্ষণমধ্যে সমস্ত বন নিঃশব্দ হ’ল, প্রস্রবণের নিনাদ ও পক্ষিরবও থেমে গেল। সেই সময়ে মূক নামে এক দানব বরাহের রূপে অর্জুনের দিকে ধাবিত হ’ল। অর্জুন শরাঘাত করতে গেলে কিরাতবেশী মহাদেব বললেন, এই নীলমেঘবর্ণ বরাহকে মারবার ইচ্ছা আমিই আগে করেছি। অর্জুন বারণ শুনলেন না, তিনি ও কিরাত এককালেই শরমোচন করলেন, দুই শর একসঙ্গে বরাহের দেহে বিদ্ধ হ’ল। মূক দানব ভীষণ রূপ ধারণ ক’রে ম’রে গেল। অর্জুন কিরাতকে সহাস্যে বললেন, কে তুমি কনককান্তি? এই বনে স্ত্রীদের নিয়ে বিচরণ করছ কেন? আমার বরাহকে