পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
১৬১

॥ইন্দ্রলোকাভিগমনপর্বাধ্যায়॥

১১। ইন্দ্রলোকে অর্জুন—উর্বশীর অভিসার

 আকাশ আলোকিত ও মেঘ বিদীর্ণ ক’রে গম্ভীরনাদে মাতলিচালিত ইন্দ্রের রথ অর্জুনের সম্মুখে উপস্থিত হ’ল। সেই রথের মধ্যে অসি শক্তি গদা প্রাস বিদ্যুৎ বজ্র, চক্রযুক্ত মেঘধ্বনির ন্যায় শব্দকারী বায়ুবিস্ফোরক গোলক-ক্ষেপণাস্ত্র [১], মহাকায় জ্বলিতমুখ সর্প, এবং রাশীকৃত বৃহৎ শিলা ছিল। বায়ুগতি দশ সহস্র অশ্ব সেই মায়াময় দিব্য রথ বহন করে। মাতলি বললেন, ইন্দ্রপুত্র, রথে ওঠ, দেবরাজ ও অন্য দেবগণ তোমাকে দেখবার জন্য প্রতীক্ষা করছেন। অর্জুন বললেন, সাধু মাতলি, তুমি আগে রথে ওঠ, অশ্বসকল স্থির হ’ক, তার পর আমি উঠব। অর্জুন গঙ্গায় স্নান করে পবিত্র হয়ে মন্ত্রজপ ও পিতৃতর্পণ করলেন, তার পর শৈলরাজ হিমালয়ের স্তব ক’রে রথে উঠলেন। সেই আশ্চর্য রথ আকাশে উঠে মানুষের অদৃশ্য লোকে এল, যেখানে চন্দ্র সূর্য বা অগ্নির আলোক নেই। পৃথিবী থেকে যে দ্যুতিমান তারকাসমূহ দেখা যায় সেসকল অতিবৃহৎ হ’লেও দূরত্বের জন্য দীপের ন্যায় ক্ষুদ্র বোধ হয়। অর্জুন সেইসকল তারকাকে স্বস্থানে স্বতেজে দীপ্তিমান দেখলেন। মাতলি বললেন, পার্থ, ভূতল থেকে যাঁদের তারকারূপে দেখেছ সেই পুণ্যবানরা এখানে স্বস্থানে অবস্থান করছেন।

 অর্জুন অমরাবতীতে এলে দেব গন্ধর্ব সিদ্ধ ও মহর্ষিগণ হৃষ্ট হয়ে তাঁর সংবর্ধনা করলেন। তিনি নতমস্তকে প্রণাম করলে ইন্দ্র তাঁকে কোলে নিয়ে নিজের সিংহাসনে বসালেন। তুম্বরু প্রভৃতি গন্ধর্বগণ গাইতে লাগলেন, ঘৃতাচী মেনকা রম্ভা উর্বশী প্রভৃতি হাবভাবময়ী মনোহারিণী অপ্সরারা নাচতে লাগলেন। তার পর দেবগণ পাদ্য অর্ঘ্য ও আচমনীয় দিয়ে অর্জুনকে ইন্দ্রের ভবনে নিয়ে গেলেন।

 ইন্দ্রের নিকট নানাবিধ অস্ত্র শিক্ষা করে অর্জুন অমরাবতীতে পাঁচ বৎসর সুখে বাস করলেন। তিনি ইন্দ্রের আদেশে গন্ধর্ব চিত্রসেনের কাছে নৃত্য-গীতবাদ্যও শিখলেন। একদিন চিত্রসেন উবর্শীর কাছে গিয়ে বললেন, কল্যাণী, দেবরাজের আদেশে তোমাকে জানাচ্ছি যে অর্জুন তোমার প্রতি আসক্ত হয়েছেন, তিনি আজ তোমার চরণে আশ্রয় নেবেন। উর্বশী নিজেকে সম্মানিত জ্ঞান ক’রে

  1. ‘চক্রযুক্তাস্তুলাগুড়াঃ বায়ুস্ফোটাঃ সনির্ঘাতা মহামেঘস্বনাঃ।’ নীলকণ্ঠ কামান অর্থ করেছেন। স্পষ্টত প্রক্ষিপ্ত।