পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
১৬৫

বিদর্ভ দেশে দময়ন্তীর নিকট উপস্থিত হ’ল। রাজকন্যা ও তাঁর সখীরা সেই সকল আশ্চর্য হংস দেখে হৃষ্ট হয়ে তাদের ধরবার চেষ্টা করলেন। দময়ন্তী যাকে ধরতে গেলেন সেই হংস মানুষের ভাষায় বললে, নিষধরাজ নল মূর্তিমান কন্দর্পের ন্যায় রূপবান, তাঁর সমান আর কেউ নেই। আপনি যেমন নারীরত্ন, নলও সেইরূপ পুরুষশ্রেষ্ঠ, উত্তমার সঙ্গে উত্তমের মিলন অতিশয় শুভকর হবে। দময়ন্তী উত্তর দিলেন, তুমি নলের কাছে গিয়ে তাঁকেও এই কথা ব’লো। তখন হংস নিষধরাজ্যে গিয়ে নলকে সকল কথা জানালে।

 দময়ন্তী চিন্তাগ্রস্ত বিবর্ণ ও কৃশ হতে লাগলেন। সখীদের মুখে কন্যার অসুস্থতার সংবাদ শুনে বিদর্ভরাজ ভীম ভাবলেন, কন্যা যৌবনলাভ করেছে, এখন তার স্বয়ংবর হওয়া উচিত। রাজা স্বয়ংবরের আয়োজন করলেন, তাঁর নিমন্ত্রণে বহু রাজা বিদর্ভ দেশে সমবেত হলেন।

 এই সময়ে নারদ ও পর্বত দেবর্ষিদ্বয় দেবরাজ ইন্দ্রের নিকটে গেলেন। কুশলজিজ্ঞাসার পর ইন্দ্র বললেন, যে ধর্মজ্ঞ রাজারা সমরে পরাঙ্‌মুখ না হয়ে জীবন ত্যাগ করেন তাঁরা অক্ষয় স্বর্গলোক লাভ করেন। সেই ক্ষত্রিয় বীরগণ কোথায়? সেই প্রিয় অতিথিগণকে আর এখানে আসতে দেখি না কেন? নারদ বললেন, দেবরাজ, তার কারণ শুনুন।—বিদর্ভরাজকন্যা দময়ন্তী তাঁর সৌন্দর্যে পৃথিবীর সমস্ত নারীকে অতিক্রম করেছেন, শীঘ্রই তাঁর স্বয়ংবর হবে। সেই নারীরত্নকে পাবার আশায় সকল রাজা আর রাজপুত্র স্বয়ংবর সভায় যাচ্ছেন। এমন সময় অগ্নি প্রভৃতি লোকপালগণ ইন্দ্রের কাছে এলেন এবং নারদের কথা শুনে হৃষ্ট হয়ে সকলে বললেন, আমরাও যাব।

 ইন্দ্র অগ্নি বরুণ ও যম তাঁদের বাহন ও অনুচর সহ বিদর্ভ দেশে যাত্রা করলেন। পথে তাঁরা সাক্ষাৎ মন্মথতুল্য নলকে দেখে বিস্মিত হলেন, তাঁদের দময়ন্তীলাভের আশা দূর হ’ল। দেবগণ তাঁদের বিমান আকাশে রেখে ভূতলে নেমে নলকে বললেন, নিষধরাজ, তুমি সত্যব্রত, দূত হয়ে আমাদের সাহায্য কর। নল কৃতাঞ্জলি হয়ে বললেন, করব। আপনারা কে? আমাকে কার দৌত্য করতে হবে? ইন্দ্র বললেন, আমরা অমর, দময়ন্তীর জন্য এসেছি। তুমি গিয়ে তাঁকে বল যে দেবতারা তাঁকে চান, তিনি ইন্দ্র অগ্নি বরুণ ও যম এই চারজনের একজনকে বরণ করুন। নল বললেন, আমিও তাঁকে চাই, নিজেই যখন প্রার্থী তখন পরের জন্য কি করে বলব? দেবগণ, আমাকে ক্ষমা করুন। দেবতারা বললেন, তুমি করব ব’লে প্রতিশ্রুতি দিয়েছ, এখন তার অন্যথা করতে পার না, অতএব শীঘ্র যাও। নল